কলকাতা: আমলাদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফের কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাত দিল্লি সরকারের। সেই নিয়ে বিজেপি বিরোধী শিবিরে ঐক্যের সুর। জোটের প্রশ্নে এতদিন অনমনীয় থাকলেও, এ বার কলকাতা আসছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল (Arvind Kejriwal)। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। আগামী ২৩ মে কলকাতায় বৈঠক দু'জনের। 


এর আগে, ২০১৯ সালে কলকাতার মেট্রো চ্যানেলে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ধর্নায় বসেছিলেন মমতা। কলকাতার তৎকালীন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে হেনস্থা করার অভিযোগ তুলেছিলেন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। সেই সময় মমতা পাশে পেয়েছিলেন কেজরিওয়ালকে। এ বার দিল্লির সঙ্গে কেন্দ্রের টানাপোড়েন যখন চরমে, সরাসরি মমতার সঙ্গে দেখা করতে আসছেন কেজরিওয়াল।


এ দিন দিল্লিতে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে কেজরিওয়াল বলেন, "পরশু দিন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করব। প্রত্যেক রাজ্যে যাব। প্রত্যেক নেতার সঙ্গে দেখা করে অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে রাজ্যসভায় সমর্থন চাইব আমি।" মমতার সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির নেতা শরদ পওয়ার এবং শিবসেনা (সাবেক) নেতা উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গেও দেখা করবেন কেজরিওয়াল।


দিল্লিতে আমলা নিয়োগ এবং বদলির রাশ হাতে রাখতে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টকে টপকে অধ্যাদেশ জারি করে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার।  আমলাদের বদলি থেকে যাবতীয় প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত দিল্লির নির্বাচিত সরকারের বলে সাফ জানিয়েছিল শীর্ষ আদালত। তাদের সেই নির্দেশকে টপকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে কেন্দ্র। 


কেন্দ্রীয় সরকারের ওই বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় রাজধানী সিভিল সার্ভিসেস কর্তৃপক্ষ গঠন করার কথা জানানো হয়। আমলা নিয়োগহ থেকে বদলি, যাবতীয় সিদ্ধান্ত তারাই নেবে বলে জানায় কেন্দ্র। জানানো হয়, রাজধানী সিভিল সার্ভিসেস কর্তৃপক্ষের চেয়ারপার্সন হবে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। সদস্য থাকবেন মুখ্যসচিব এবং প্রধান স্বরাষ্ট্রসচিব। ভোটাভুটিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলে ভাল, নইলে লেফটেন্যান্ট গভর্নরই শেষ কথা বলবেন।


আরও পড়ুন: PM Narendra Modi:বর্তমান বাস্তবের ছবি তুলে না ধরলে 'কথাসর্বস্ব' প্রতিষ্ঠান হয়ে থেকে যাবে রাষ্ট্রপুঞ্জ, জি-৭-এ বার্তা মোদির


এখনও পর্যন্ত সংসদের দুই কক্ষে তাতে সিলমোহর পড়েনি যদিও, রাজ্যগুলির উপর কেন্দ্রীয় দখলদারি প্রতিষ্ঠা করতেই এই অধ্যাদেশ বলে অভিযোগ উঠছে। তাই অবিজেপি রাজ্যগুলিতে এ নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। রবিবার বিষয়টি নিয়ে দিল্লিতে কেজরিওয়ালের সঙ্গে বৈঠক করেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও। তার পরই কেজরিওয়াল-মমতা সাক্ষাতের কথা সামনে এল। 


তবে শুধুই কেন্দ্রীয় অধ্যাদেশ নিয়ে দু'জনের মধ্যে কথা হবে, সেখানে বিরোধী জোটের প্রশ্ন উঠবে না, সে কথা মানতে নারাজ বিশেষজ্ঞ মহল। কারণ কর্নাটক বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ধরাশায়ী হওয়ার পর থেকেই বিজেপি বিরোধী জোটের সলতে পাকানোয় বিশেষ সক্রিয়তা লক্ষ্য় করা যাচ্ছে। এতদিন 'একলা চলো' নীতিতে অনড় থাকলেও, কংগ্রেসের হাত ধরতে সম্মত হয়েছেন মমতা। অবিজেপি শিবিরকে একছাদের নীচে আনতে বেশ কিছু দিন ধরেই সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন নীতীশ। তাই তাঁর সঙ্গে বৈঠকের পরই কেজরিওয়ালের কলকাতা আগমন ঘিরে দুইয়ে দুইয়ে চার করে নিচ্ছেন অনেকে। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী জোটে সিলমোহর পড়ার দিকেই অবিজেপি শিবির এগোচ্ছে বলে মত অনেকের (Lok Sabha Elections 2024)।