কলকাতা: বর্ষা শুরু হতেই ফের ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা দিয়েছে। সেই নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছে শহর কলকাতায়। ইতিমধ্যেই কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে চিঠি লিখেছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তবে শুধু শহর কলকাতা নয়, আশপাশের জেলাগুলিতেও ভয় ধরাচ্ছে ডেঙ্গি। সেই তালিকায় যেমন রয়েছে হাওড়া, দুই বর্ধমান, তেমনই রয়েছে নদিয়া, বাঁকুড়া, জলপাইগুড়ির মতো জেলা। (Dengue Situation)


নদিয়া 


নদিয়ার রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ২১ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত। এছাড়া, ৫০ জন জ্বর নিয়ে ভর্তি। ডেঙ্গি মোকাবিলায় তৎপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল চত্বর সাফাইয়ের কাজ চলছে। জমা জল ও আবর্জনার স্তূপ পরিষ্কার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের সুপার প্রহ্লাদ অধিকারী। (Dengue Patients)


পূর্ব বর্ধমান 


কাটোয়া ও কালনা মহকুমা হাসপাতাল, দুই হাসপাতালেই জ্বর নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন বহু রোগী। কালনা হাসপাতালে ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে তিন জন ভর্তি। জ্বরের উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন ৬০ জন। ডেঙ্গি মোকাবিলায় ৪০ বেডের আলাদা ইউনিট খুলেছে কালনা হাসপাতাল। প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলায় এক একটি বেডে দু'জন রোগীকে রাখতে হচ্ছে। অন্য দিকে, কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালেও আউটডোরে জ্বরের উপসর্গ নিয়ে অনেকে আসছেন। গড়ে ১০-১২ জন ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে। এদের মধ্যে শিশুও রয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত কাটোয়া হাসপাতালে ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে কেউ ভর্তি হননি। 


আরও পড়ুন: Dengue in Howrah : বাড়ছে ডেঙ্গির দাপট, সচেতনতায় জোর, ফিভার ক্লিনিক খোলার পরিকল্পনা হাওড়ায়


পশ্চিম বর্ধমান 


দুর্গাপুর পুরসভার পলাশডিহা এলাকায় ডেঙ্গির দাপট সবথেকে বেশি। গত এক সপ্তাহে ৬১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। পুরসভা ও জেলা স্বাস্থ্য দফতরের ক্যাম্প তৈরি করে রক্তপরীক্ষা করা হচ্ছে। পাশাপাশি, চলছে সাফাই এবং ব্লিচিং ছড়ানোর কাজ। দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্ণণ ঘোড়ুইয়ের দাবি, প্রায় একবছর দুর্গাপুর পুরসভার মেয়াদ ফুরিয়েছে। ডেঙ্গি মোকাবিলায় পরিষেবা দিতে ব্যর্থ প্রশাসকমণ্ডলী। অযথা বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে, পুরসভা ও স্বাস্থ্য দফতর বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। 


হাওড়া 


হাওড়াতেও লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গিতে আক্রান্ত ১৩৩ জন। এর মধ্যে শহর এলাকায় ৯৬ জন এবং গ্রামীণ এলাকায় ৩৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। হাওড়া পুরসভা এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ জন। এর মধ্যে গত কয়েকদিনেই ১২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। ১৫, ৩৬ এবং ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গির প্রকোপ সবথেকে বেশি। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দাবি, এবারে এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গি পরিস্থিতি বিপজ্জনক নয়। হাওড়া পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান সুজয় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ডেঙ্গি প্রতিরোধে একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত জল জমা নিয়ে প্রায় দেড়হাজার বাড়িতে নোটিস পাঠিয়েছে পুরসভা। হাওড়া পুর আদালতে ৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় মশা মারার তেল স্প্রে করা হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতন করছেন স্বাস্থ্য কর্মীরা। এর পাশাপাশি, পুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে ফিভার ক্লিনিক চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে হাওড়া পুরসভার। 


বাঁকুড়া 

বাঁকুড়াতেও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ডেঙ্গি সংক্রমণ। পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে গতবারের মতোই এবারও দাপট দেখাচ্ছে ডেঙ্গি। প্রতিটি ওয়ার্ডেই জমা জল ও আর্বজনা পরিষ্কারের কাজ চলছে।  গত একমাসে গোটা জেলায় ৫০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। 


জলপাইগুড়ি 

জলপাইগুড়ি শহরেও এবার তিন জনের শরীরে থাবা বসিয়েছে ডেঙ্গি। জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত ৫৫ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছেন। জলপাইগুড়ি পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গি আক্রান্ত এক স্কুল পড়ুয়া। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানিয়েছেন, গতবছরের তুলনায় এবার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে ডেঙ্গি পরিস্থিতি। যদিও জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। তবে তা অন্য বছরের তুলনায় কম বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি। ডেঙ্গি রুখতে তৎপর পুরসভা। পুর-এলাকায় নর্দমা পরিষ্কার ও সাফাই অভিযান চলছে নিয়মিত। ছড়ানো হচ্ছে মশা মারার তেল।