ঘাটাল: তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ঘাটালে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি। তারকা সাংসদ দেবের সামনেই শাসক দলের দুই গোষ্ঠীর হাতাহাতি। এমনকি রক্তও ঝরল। শিশুমেলার আয়োজন নিয়ে মিটিং চলাকালীন তুলকালাম শুরু হয়। দেবের অনুগামীদের সঙ্গে শঙ্কর দলুইয়ের অনুগামীদের হাতাহাতি শুরু হয়। কয়েক দিন আগেই শিশুমেলার আয়োজন নিয়ে বৈঠক করেন প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক শঙ্কর দলুই। সেই নিয়েই দেবের অনুগামীদের সঙ্গে সংঘাত দেখা দেয় দেবের অনুগামীদের। লাঠিসোঁটা, লোহার রড দিয়ে মারধর করার দৃশ্য ধরা পড়েছে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায়। (Dev in Ghatal)


শিশুমেলার আয়োজন ঘিরে রবিবার ধুন্ধুমার বাধে ঘাটালে। দেবের অনুগামীদের সঙ্গে হাতাহাতি শুরু হয় শঙ্করের অনুগামীদের। ঘাটালের অরবিন্দ স্টেডিয়ামে মেলা নিয়ে তৃণমূলের বৈঠকে চলাকালীন ধুন্ধুমার কাণ্ড শুরু হয়। গন্ডগোলের জেরে বৈঠক ছাড়েন তৃণমূল সাংসদ দেব। ঘাটালের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক শঙ্কর জানিয়েছেন, শিশুমেলা নিয়ে কয়েকদিন আগেই বৈঠক হয়েছিল। আজ যা হল পরিকল্পিত ভাবে করা হল বলে দাবি তাঁর। (Ghatal News)


ঘটনাস্থল থেকে যে ছবি এবং ভিডিও সামনে এসেছে, তাতে দেখা গিয়েছে তীব্র চিৎকার চেঁচামেচি চলছে। ধস্তাধস্তি, হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছেন তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর লোকজন। তেড়ে যাচ্ছেন পরস্পরকে দেখে। হাত তুলে দুই পক্ষকে থামানোর চেষ্টা করেন দেব। ঘটনাস্থলে পুলিশও মজুত ছিল সেই সময়। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। 


জানা গিয়েছে, শিশুমেলাকে কেন্দ্র করেই এই ঝামেলার সূত্রপাত। এই শিশুমেলা বরাবরই ঘাটালে বড় করে অনুষ্ঠিত হয়। ওই শিশুমেলার রাশ কার হাতে থাকবে, সেই নিয়েই গন্ডগোল। এতদিন শিশুমেলা অরাজনৈতিক একটি মেলা থাকলেও, দেব এবং শঙ্করের সংঘাতে ওই মেলার গায়েও রাজনীতির রং লেগেছে বলে জানা যাচ্ছে।


গত বছরও এই মেলায় যৌথ ভাবে শামিল ছিলেন দেব এবং শঙ্কর। তাঁরা দু'জনই যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। এ বছর একটু অন্যভাবে মেলা করতে চান বলে জানিয়েছিলেন দেব। সেই নিয়ে গত মাসের ২৮ তারিখেই বৈঠক করার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু কয়েকদিন আগেই মেলা নিয়ে বৈঠক করেন শঙ্কর। সেই বৈঠকেও ডাকা হয়নি দেবকে, দেবের প্রতিনিধি এবং সরকারি আধিরিকদের। এমনকি মেলা কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয় দেবকে। এর পরই ঘাটালের বিজেপি-র বিধায়ক শীতল কপাট জায়গায় জায়গায় পোস্টার লাগান যে মেলাকে কেন্দ্র করে রাজনীতি হচ্ছে, তোলাবাজি হচ্ছে। 


সেই পরিস্থিতিতে রবিবার তড়িঘড়ি দেব অরবিন্দ স্টেডিয়ামে বৈঠক ডাকেন। নতুন করে কমিটি গড়বেন বলে জানান। সেই মতো আজ সেখানে দেব পৌঁছনোর পরই স্টেডিয়ামে উত্তেজনা তৈরি হয়। দেবের বিরুদ্ধে নানা মন্তব্য উড়ে আসতে শুরু করে। প্রথমে ঠেলাঠেলি, ধাক্কাধাক্কি, হাতাহাতি শুরু হয়। এর পর লাঠি নিয়ে বেধড়ক মারধর শুরু হয়। এত লাঠিসোঁটা কোথা থেকে এল, সেই প্রশ্নের উত্তর মিলছে না।


যদিও এক পক্ষের দাবি, অন্যরা আগে থেকেই লাঠিসোঁটা জড়ো করে রেখেছিল বলে। কিল, চড়, ঘুষি, লাঠিপেটা কিছুই বাদ যায়নি। বেশ কয়েক জনের জামা রক্তে ভিজে যেতে দেখা গিয়েছে। ব্যাপক ভাঙচুরও চলেছে। চেয়ার, টেবিল ভাঙা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে সেখানে। এমনকি যে খাবর আনা হয়েছিল, তা-ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। বেশ কয়েক জন আহত হন এদিন। এ নিয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করেননি দেব। এই মুহূর্তে ঘাটালে সাংসদের কার্যালয়ে রয়েছেন তিনি। সেখানে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি।


এই ঘটনায় মুখ খুলেছেন রাজ্য বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, "গোটা দলটাই যখন বিপথগামী, অনুগামীদের মধ্যে সংঘর্ষ হবেই। শিশুমেলার আয়োজন করছে, কিন্তু শিশুকল্যাণ এদের উদ্দেশ্য নয়। মেলার আড়ালে রয়েছে বিজ্ঞান থেকে রোজগার, ঠিকাদারদের থেকে রোজগার, চাঁদা তোলে থেকে রোজগার। ভাগ নিয়ে অঙ্ক মিলছে না, ৭৫-২৫ অঙ্ক মিলছে না। যাওয়ার সময় এমনই হয়। উপনির্বাচনে ছয় আসনে জিতে যদি মনে করে থাকে এভাবে চলে যাবে, তাহলে মূর্খের স্বর্গে বাস করছে। ওখানকার সাংসদের সঙ্গে ব্যক্তিগত কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু এই পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হলে তৃণমূলের বিসর্জন প্রয়োজন।"