কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, বিজেন্দ্র সিংহ, সন্দীপ সরকার: ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে, অমিত শাহর জনসভার পর তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে তুমুল অশান্তি হয়েছিল কাঁথিতে। যখন তৃণমূলে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। আর সেই সময় তৃণমূলের করা অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা হয়েছিল, দিলীপ ঘোষ-সহ একাধিক বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে। সেই মামলায় আজ কোর্টে হাজিরা দিলেন দিলীপ ঘোষ। তারপর বিধানসভায় গিয়ে, শুভেন্দু অধিকারীর পাশে বসে বৈঠক করলেন পরিষদীয় দলের সঙ্গে। যা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল ও সিপিএম।
রাজনীতি বিষমবস্তু, একটা সময় প্রতিপক্ষ, আজ তাঁরাই সহযোদ্ধা! মঙ্গলবার একটি মামলায় দিলীপ ঘোষকে আদালতে হাজিরা দিতে হয়। যে মামলাটি ৬ বছর আগে তৃণমূলের অভিযোগের ভিত্তিতে দায়ের হয়েছিল। যখন সেই দলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ ও হেভিওয়েট নেতা ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। তারিখটা ২০১৯ সালের, ২৯ জানুয়ারি। লোকসভার ভোটের প্রচারে শুভেন্দু অধিকারীর গড় পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথিতে জনসভা করেছিলেন অমিত শাহ। সেই সভার পরই রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল এলাকা। রাস্তার ওপরই দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল তৃণমূল ও বিজেপি।
বাস ভাঙচুরের পাশাপাশি, একাধিক মোটরবাইকেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাণ্ডব থেকে রেহাই পায়নি পুলিশের গাড়িও। সেই ঘটনার পরই, দিলীপ ঘোষ-সহ ৩০জনেরও বেশি বিজেপির নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিল তৃণমূল। সেই সময় শুভেন্দু অধিকারী ছিলেন তৃণমূলের হাইপ্রোফাইল নেতা ও পরিবহণমন্ত্রী। তখন বিজেপিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন তিনি। পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, আমাদের মারলে আমরা কি রসগোল্লা ছুঁড়ব..।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু, ২০১৯ সালে তৃণমূলের দায়ের করা সেই মামলায়, এদিন সল্টলেকের আদালতের হাজিরা দিতে হয় দিলীপ ঘোষ ও বিজেপির একাধিক নেতা-কর্মীকে। শুভেন্দু তখন্ তো ওখানকার তৃণমূল নেতা ছিলেন... প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুলতেই, দিলীপ ঘোষ বলেন রোজই পার্টি পাল্টায়। অনেকে বাংলা ছাড়া হয়ে গেছে। তখন তখন উনি ওপাশে ছিলেন। আমরা এ পাশে। এরকম যে কেউ এসেছিল, তারপর পার্টি পাল্টাপাল্টি হয়ে গেছে। এরকম অনেক নেতা আছে। আমার নামে কেস দিয়েছেন, তারপর পার্টি পাল্টাপাল্টি হয়।'
আদালত থেকে বেরিয়ে সোজা বিধানসভায় পৌঁছন দিলীপ ঘোষ। সেখানেই তাঁকে স্বাগত জানান শুভেনদু অধিকারী। দুজনকে একসঙ্গে কাজ করার কথাও বলেন! আর একদা রাজনৈতিক শত্রুর এখন বনধু হওয়া নিয়েই, কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে তৃণমূল ও সিপিএম। তৃণমূল রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, দিলীপের বিরুদ্ধে কার কথায় মামলা হয়েছে, দিলীপ নিশ্চয়ই জানেন।সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, বর্তমানে রাজনীতিকে এখন এ দিকে, কাল ওদিকে! আজ শত্রু, কাল বন্ধু। কোনও কিছুই চিরস্থায়ী নয়।