দার্জিলিং: এই জেলার সদর শহর দার্জিলিং। এছাড়া কালিম্পং, কার্শিয়াং ও শিলিগুড়ি এই জেলার প্রধান তিনটি শহর। দার্জিলিং শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ভাষার শব্দ 'দুর্জয়' লিঙ্গ থেকে। এই শব্দের অর্থ হল অদম্য ক্ষমতার অধিকারী শিব যিনি হিমালয় শাসন করেন। আবার অনেকের মতে এই নামটি এসেছে তিব্বতি শব্দ 'দোর্জে' থেকে।


দার্জিলিং জেলার ইতিহাস


১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক প্রতিনিধি দল এই এলাকায় ব্রিটিশ সেনা বাহিনীর স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে লেপচা ও হিন্দুস্থানি ভাষায় রচিত এক চুক্তির ফলে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে দার্জিলিং অঞ্চলের লিজ দেওয়া হয়। এরপর ১৮৪৮-এ এখানে ব্রিটিশ সেনাদের অস্ত্রাগার নির্মিত হয়। ১৮৫০-এ এই শহরকে পুরসভায় পরিণত করা হয়। এর পরবর্তী সময়ে ১৯৪০ এর পর এই জেলার চা শ্রমিকদের সংঘবদ্ধ করে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদি আন্দোলনের ডাক দেন কমিউনিস্টরা। ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর দার্জিলিং, কার্শিয়ং, কালিম্পং ও তরাই অঞ্চলের কিছু অংশ নিয়ে নির্মিত দার্জিলিং জেলাকে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত করা হয়।


রাজনীতি 


এই জেলার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরতে হলে গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের কথা বলতেই হয়। এটি একটি প্রস্তাবিত রাজ্য, যা দার্জিলিং পাহাড় ও সেখানকার জনগণ ও ডুয়ার্সের গোর্খা জনগোষ্ঠী অনেক দিন ধরেই তাদের জাতিগত ও ভাষাগত অধিকারের দাবিতে করে আসছেন। গোর্খা ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট ও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার অধীনে ২ টো আলাদা আলাদা আন্দোলন সংঘটিত হয়েছে। দার্জিলিং জেলার প্রধান শহর শিলিগুড়ি। এই বিধানসভা কেন্দ্র থেকে সবচেয়ে বেশি ৫ বার জিতে বিধায়ক হয়েছেন অশোক ভট্টাচার্য। এই মুহূর্তে এই এলাকার বিধায়ক শংকর ঘোষ।


অবস্থান


দার্জিলিং জেলার সদর শহর দার্জিলিং হিমালয়ের শিবালিক পর্বতশ্রেণিতে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬৭০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। 


ভূ-পরিচয়


ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে দেখলে এই জেলাটি ২টো অঞ্চলে বিভক্ত। পার্বত্য সমতলে জেলার গোটা পার্বত্য অঞ্চল। বর্তমানে গোর্খাল্যান্ড আঞ্চলিক প্রশাসন নামে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অধীনস্থ এক আধা স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত। এই জেলার উত্তরে সিকিম, দক্ষিণে বিহারের কিছুটা। পূর্বে জলপাইগুড়ি ও পশ্চিমে নেপাল। এই জেলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বরফ গলা জল বাহিত নদী। তার মধ্যে রয়েছে লোধমা নদী, রঙ্গীত নদী, ছোট রঙ্গীত নদী, বড় রঙ্গীত নদী, রঙ্গিও নদী, রঙ্গ নদী, রতু নদী, কাহিল নদী প্রভৃতি। এছাড়া মহানন্দা নদী।


যাতায়াত


ট্রেনে বা রেলপথে দার্জিলিং-এ পৌঁছানোর নিকটবর্তী রেলওয়ে স্টেশন নিউ-জলপাইগুড়ি। দার্জিলিং থেকে যা 88 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। স্টেশন থেকে দার্জিলিং-এ গাড়ির মাধ্যমে গেলে প্রায় ১ ঘন্টা ৪০ মিনিট সময় লাগে। ভারত জুড়ে সব ট্রেনগুলি এই স্টেশনে পৌঁছায়। সড়কপথে দার্জিলিং যাওয়ার জন্য শিলিগুড়ি থেকে বাস রয়েছে। এছাড়া রিজার্ভ করেও যাওয়া যায়। বিমানপথে আসতে হলে নামতে হবে বাগডোগরা বিমানবন্দরে। এখান থেকে ৬৮ কিমি দূরত্বে অবস্থিত দার্জিলিং। 


পর্যটন


প্রকৃতির অসাধারণ শোভা। এই জেলা বাংলার বুকে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। চা বাগানে পরিবেষ্ঠিত এই জেলায় টয় ট্রেন ও পাহাড়ের অমোঘ আকর্ষণে প্রতি বছর পর্যটকরা ছুটে যান। 


উল্লেখযোগ্য


খেলাধূলো ও সাংস্কৃতিক কার্যকলাপেও এই জেলার নাম রয়েছে। অর্জুন পুরস্কার প্রাপক মান্তু ঘোষ রয়েছেন। এছাড়াও শুভজিৎ সাহা, সৌম্যজিৎ ঘোষ, অঙ্কিতা দাস ও কস্তুরী চক্রবর্তী... একের পর এক টেবিল টেনিস তারকা উঠে এসেছেন জাতীয় স্তরে। ক্রিকেটে শিলিগুড়ি থেকে ভারতীয় দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছেন ঋদ্ধিমান সাহা, রিচা ঘোষ।