বহরমপুর: ইতিহাসের প্রায় প্রতি পাতায় বাংলার যে জেলার নাম থাকে, তা মুর্শিদাবাদ (Murshidabad)। ব্রিটিশ শাসনের আগে স্বাধীন বাংলার শেষ রাজধানীর নামকরণ করা হয়েছিল বাংলা, বিহার (Bihar) ও ওড়িশার (Orissa) দেওয়ান নবাব মুর্শিদ কুলি খাঁয়ের নামে। ভাগীরথীর তীরে অবস্থিত, সেই মুর্শিদাবাদ শহর অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ। এই শহরটিকে ১৭১৭ সালে বাংলার রাজধানী করা হয়। ১৭৭৩ সালে ব্রিটিশ আমলে রাজধানী কলকাতায় স্থানান্তরিত হয়। মুর্শিদাবাদের পরতে পরতে ইতিহাসের ছোঁয়া। পলাশির যুদ্ধক্ষেত্র, ইমামবড়া, কাটরা মসজিদ... শুরু করলে শেষ হবে না। ফলে যুগ যুগ ধরে এই মুর্শিদাবাদ জেলা রাজ্য-দেশ-বিদেশের একাধিক পর্যটকের (tourist) অন্যতম আকর্ষণ। কী কী দর্শনীয় স্থান আছে মুর্শিদাবাদে? দেখে নেওয়া যাক সেই তালিকা।
হাজারদুয়ারি
মুর্শিদাবাদের অন্যতম আকর্ষণ এক হাজার দরজা সম্পন্ন এই প্রাসাদ। মীর জাফরের বংশধর নবাব নাজিম হুমায়ুন জাহ-এর জন্য ১৮৩৭ সালে ডানকান ম্যাকলিওড দ্বারা তৈরি এই প্রাসাদে এক হাজারটি দরজা (যার মধ্যে শুধুমাত্র ৯০০টি আসল), ১১৪টি ঘর এবং ৮টি গ্যালারি রয়েছে।
নিজামত ইমামবড়া
হাজারদুয়ারির উত্তর দিকের সমান্তরালে অবস্থিত। ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে নবাব নাজিম মনসুর আলি খান ফেরাদুন জাহ নির্মিত, এটি বাংলার বৃহত্তম ইমামবাড়া এবং সম্ভবত ভারতের মধ্যেও বৃহত্তম। প্রাসাদের চারপাশে রয়েছে, গঙ্গার তীরের ওয়াসেফ মঞ্জিল, ত্রিপোলিয়া গেট, দক্ষিণ দরওয়াজা, চওক দরওয়াজা, ঘড়িঘর, বাচ্ছাওয়ালি টোপ (একটি কামান)। রয়েছে সিরাজ-উদ-দৌলা নির্মিত একমাত্র টিকে থাকা কাঠামো 'মদিনা'।
নাসিপুর প্যালেস
হাজারদুয়ারির ক্ষুদ্র সংস্করণ। নাসিপুর রাজপ্রাসাদ জগৎ শেঠের বাড়ির খুব কাছে আখড়ার খানিক উত্তর দিকে অবস্থিত। উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগে এটি তৈরি করেছিলেন রাজা কীর্তিচাঁদ বাহাদুর। এই প্রাসাদটি দেবী সিংহের বাড়ি নামেই খ্যাত। নাসিপুরের ঝুলনও খুব বিখ্যাত।
জাহানকোষা কামান
জাহানকোষা হল কাটরার দক্ষিণ-পূর্বে তোপখানায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক কামান। এখানে জাহান কোষা "বিশ্বের ধ্বংসকারী" নামক বিশাল কামান রয়েছে, যা মূলত চাকাসমেত একটি গাড়ির ওপর রাখা। পাশের একটি পিপুল গাছ মাটি থেকে কামানটিকে প্রায় চার ফুট উঁচুতে ধরে রাখে। আপাতত চাকাগুলো অদৃশ্য হয়ে গেছে।
খোশ বাগ
খোশ বাগ ভাগীরথীর বিপরীত তীরে অবস্থিত। নবাব আলিবর্দি খানের কবর, তাঁর মা, সিরাজ-উদ-দৌলা এবং তাঁর স্ত্রী লুৎফুন্নেসা এবং নবাব পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা এখানে বসবাস করতেন। খোশ বাগ কবরস্থানটি ৭.৬৫ একর জমির উপর নির্মিত।
জাফরগঞ্জ কবরস্থান
দেউড়ির বিপরীতে, হাজারদুয়ারি থেকে দেড় কিমি উত্তরে জাফরগঞ্জ কবরস্থান। এখানে মিরজাফর ও তাঁর পরিবারের এক হাজারেরও বেশি কবর রয়েছে। গেট বরাবর, পূর্ব প্রান্ত থেকে তৃতীয় কবরে মিরজাফর শায়িত। তাঁর স্ত্রী মণি বেগম ও বাবু বেগমকেও এখানেই কবর দেওয়া হয়।
কাটরা মসজিদ
কাটরা মসজিদ মুর্শিদাবাদ শহরের উত্তর-পূর্ব দিকে প্রায় এক মাইল দূরে এবং মুর্শিদাবাদ রেল স্টেশন থেকে মাত্র ৩ কিমি দূরে অবস্থিত। এটি নবাব মুর্শিদ কুলি খাঁ দ্বারা ১৭২৩ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত হয়েছিল। মসজিদটি ১ বছরের মধ্যে মুরাদ ফরাশ নামে একজন স্থপতি দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। মসজিদের সিঁড়ির নিচে ১৭২৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে মুর্শিদ কুলি খাঁয়ের মৃতদেহ শায়িত রয়েছে। মসজিদের কম্পাউন্ডে একই সময়ে ২০০০ জন নামাজ পড়তে পারে।
আরও পড়ুন: ঘুরে আসি : এল ডোরাডোয় কয়েকদিন
মুর্শিদাবাদে কীভাবে পৌঁছবেন?
আকাশপথে: কলকাতা বিমানবন্দরে এসে কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদ যাওয়া যেতে পারে।
রেলপথে: সবচেয়ে কাছের স্টেশন হচ্ছে বহরমপুর কোর্ট। এই স্টেশন কলকাতার সঙ্গে খুব ভালভাবেই সংযুক্ত।
সড়কপথে: বহরমপুরের সঙ্গে সড়কপথে কলকাতা ও দেশের বাকি অংশেরও খুব ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা। কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদ ও বহরমপুরের একাধিক বাসও রয়েছে।
কোথায় থাকবেন?
স্টেশন থেকে বেরিয়েই একাধিক হোটেল, রিসর্ট নজরে পড়বে। খাওয়া-দাওয়ারও সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে।