পশ্চিম বর্ধমান: আগে ছিল একটিই জেলা। যার একদিকে ছিল শস্যের ভান্ডার অন্যদিকে শিল্পের রমরমা। পরে প্রশাসনিক সুবিধার জন্য ভাগ করা হয়েছে। একটি হয়েছে পূর্ব বর্ধমান, অন্যটি পশ্চিম বর্ধমান। পশ্চিমবঙ্গের শিল্পের কথা বললেই যে কটি জায়গায় কথা প্রথমে মনে পড়ে যায় তার অন্যতম হল আসানসোল। এই শহর পশ্চিম বর্ধমানের জেলা সদর। একাধিক ভারী শিল্প, মূলত খনি শিল্পের শহর হিসেবেই পরিচিত আসানসোল। পাশাপাশি রয়েছে কুলটি, বার্নপুরের মতো শিল্প শহর। এই আপাত-যান্ত্রিক চেহারার মধ্য়ে লুকিয়ে রয়েছে অন্য একটি চেহারাও। যার টানে প্রতিবছর, বছরের নানা সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে পর্যটকেরা ভিড় করেন পশ্চিম বর্ধমানে। আধুনিকতার সঙ্গে ইতিহাসের, আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে বিজ্ঞানচেতনার মিশেলের সাক্ষী এই জেলা। 


পশ্চিম বর্ধমানে একাধিক ঘোরার জায়গা রয়েছে, যা উইকএন্ড ট্যুরের জন্য ভীষণ আকর্ষণীয়। অল্প কদিনের ছুটি কাটানোর বাংলার এই জেলায় রয়েছে দুরন্ত সম্ভার।


মাইথন বাঁধ: 
জেলার অন্যতম পর্যটন-আকর্ষণ মাইথন ড্যাম। ঝাড়খন্ড সীমানার একেবারে কাছে অবস্থিত এটি। বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বরাকর নদীর উপর তৈরি হয়েছিল এই বাঁধ। পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎশক্তিও উৎপন্ন করা হয়। এখানে মাটির তলায় পাওয়ার স্টেশন রয়েছে। যা দক্ষিণ পূর্ব ভারতে প্রথম ছিল।


বার্নপুর নেহরু পার্ক:
বার্নপুরের দামোদর নদের পাশেই রয়েছে এটি।  IISCO-এর একজন জার্মান জেনারেল ম্যানেজারের হাতে এর গোড়াপত্তন হয়। তাঁর নাম ছিল F.W.A Lahmeyer. তাঁর নামের সঙ্গে মিলিয়েই এই পার্কটিকে Lahmeyer পার্ক বলে ডাকা হতো। পরে নেহরুর নামে নামকরণ হয় এই পার্কের। 


বাথানবাড়ি:
দুর্গাপুর থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে বাথানবাড়ি। পিকনিক স্পট হিসেবে এর জনপ্রিয়তা রয়েছে। দামোদর নদীর পাড়ে, বাংলা-ঝাড়খন্ড সীমানায় রয়েছে এই পর্যটনস্থল। মাইথন ড্যামের জলে তৈরি লেকও এখানকার অন্যতম আকর্ষণ। দুর্গাপুর মহকুমার মধ্যেই রয়েছে রনডিহা। পানাগড় থেকে ১০ কিলোমিটার মতো দূরে রয়েছে এই পিকনিক স্পট।  


কঙ্কালেশ্বরী কালী মন্দির:
পশ্চিম বর্ধমান জেলার অন্যতম জনপ্রিয় জায়গা হয় কঙ্কালেশ্বরী কালী মন্দির। পাথরে খোদাই করা দেবীমূর্তি রয়েছে এখানে। এমন কাজ, যাতে দেবীর প্রতিটি অস্থি বোঝা যাচ্ছে, হঠাৎ দেখলে মনে হবে দেবীমূর্তি যেন কঙ্কালসার। সেইকারণেই এমন নাম। এখানে দেবী অষ্টহাতের। দেবীর হাতে ত্রিশূল রয়েছে। নীচে শায়িত রয়েছেন শিব। তাঁর নাভি থেকে উৎপন্ন পদ্মের মধ্যে বিরাজ করছেন দেবী। 


গড় জঙ্গল:
পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুর মহকুমার কাঁকসা সিডি ব্লকের রয়েছে গড় জঙ্গল। কথিত রয়েছে এখানে মেধাস মুনির আশ্রম ছিল। রাজা সুরথ মেধাস মুনির কাছ থেকে দেবী মাহাত্ম্য শিখেছিলেন বলে কথিত রয়েছে। পুরাণ অনুযায়ী এইখানেই দুর্গাপুজো করেন রাজা সুরথ। 


ইছাই ঘোষের দেউল:
পশ্চিম বর্ধমানের গৌরাঙ্গপুরের কাছে রয়েছে ইছাই ঘোষের দেউল, যা রেখা দেউল নামেও পরিচিত। এটি ASI তালিকাভুক্ত একটি স্থাপত্য। 


ঘাঘর বুড়ি মন্দির:
পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল শহরের কাছেই জাতীয় সড়কের পাশেই রয়েছে এই মন্দিরটি। এর নাম ঘাঘর বুড়ি মন্দির। দেবী কালীর উদ্দেশে উৎসর্গ করা হয়েছে এই মন্দির। অন্যতম প্রাচীন মন্দির এটি। পর্যটকদের অত্যন্ত পছন্দের জায়গা এটি।


কীভাবে পৌঁছবেন:


গাড়িতে: কলকাতা থেকে দুর্গাপুরের দূরত্ব ১৭৩ কিলোমিটার মতো। ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে পৌঁছনো যাবে। কলকাতা থেকে আসানসোলের দূরত্ব ২১৩ কিলোমিটার মতো। NH19 এবং AH1 দিয়ে পৌঁছনো যাবে।


ট্রেনে: জেলায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশন রয়েছে. আসানসোল রেল স্টেশন এবং দুর্গাপুর রেল স্টেশন। কলকাতা ও হাওড়া থেকে ট্রেন যোগাযোগ রয়েছে। 


বিমান: জেলায় বিমানবন্দরও রয়েছে। কাজি নজরুল ইসলাম বিমানবন্দর। 


তথ্যসূত্র:  www.wbtourism.gov.in এবং https://paschimbardhaman.gov.in


আরও পড়ুন: আঁকেবাঁকে চৈতন্যের স্মৃতি, বিশ্বজোড়া খ্যাতি পুতুলের, ঘুরে আসুন নদিয়ায়