নদীয়া: ১৭৫৭ সালে পলাশীর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সাক্ষী এই জেলা। যার কোণায় কোণায় রয়েছে ইতিহাস ছোঁয়া। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর স্মৃতি বিজড়িত নদীয়া জেলার এরাজ্যের অন্যতম পুরনো জেলা। শিল্পকলা হোক বা রাজ রাজাদের আভিজাত্য, নদীয়া নামটার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নানা গল্প। সেদিনের স্বাধীন ভারতের শেষ সূর্যাস্ত দেখেছিল ভাগরথীর পাড়ের ছোট্ট এক টুকরো জেলা। তারপর ভাগীরথী দিয়ে জল বয়ে গিয়েছে অনেক। সময় পেরিয়েছে। যুগ বদলেছে।  ইংরেজদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে দেশ হয়েছে স্বাধীন। কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুলের জগৎজোড়া খ্যাতি হয়েছে। বিশ্বসেরা শান্তিপুরের হয়েছে তাঁত শিল্প। ১৭৮৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের সময় এই জেলা তৈরি হয়। এরাজ্য তো বটেই দেশের নানা প্রান্তের মানুষ ছুটে আসেন জেলার দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখতে। পর্যটকের (tourist) অন্যতম আকর্ষণ নদীয়ায় কী কী দর্শনীয় স্থান রয়েছে? দেখে নেওয়া যাক সেই তালিকা।


মায়াপুর: মায়াপুর কলকাতা থেকে ১৩০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। নবদ্বীপের কাছে জলঙ্গীর সঙ্গে সঙ্গমস্থলে গঙ্গা নদীর তীরে মায়াপুর। প্রতিবছর বহু তীর্থযাত্রী মায়াপুরের ইসকনে যান।


নবদ্বীপ: ভাগীরথী নদীর পশ্চিমে নবদ্বীপ। যার দূরত্ব কৃষ্ণনগর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে। শ্রী চৈতন্যের জন্মস্থান এই নবদ্বীপ। যিনি বৈষ্ণব ধারণা এবং ভক্তি ধর্ম প্রচার করতেন। নবদ্বীপ ছিল সেন বংশের রাজধানী। ১১৭৯ থেকে  ১২০৩ সাল পর্যন্ত লক্ষ্মণ সেনের রাজত্বকালে এই নবদ্বীপই ছিল তাদের রাজধানী। ১৮৩৫ সালে নবদ্বীপে স্থাপিত হয় দ্বাদশ শিব মন্দির।


শান্তিপুর: নবম শতাব্দী থেকে সংস্কৃত শিক্ষা ও সাহিত্য, বৈদিক গ্রন্থ এবং ধর্মগ্রন্থের কেন্দ্রস্থল ছিল শান্তিপুর। কৃষ্ণনগর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শান্তিপুর। শান্তিপুরে রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় মন্দির। যার মধ্যে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী ‘আটচাল’ পদ্ধতিতে নির্মিত শ্যাম চাঁদ মন্দির, পোড়ামাটির নকশা সহ জলেশ্বর মন্দির এবং অদ্বৈত প্রভু মন্দির শান্তিপুরের উল্লেখযোগ্য মন্দির। শান্তিপুরের তাঁতের শাড়ির খ্যাতি জগৎ জোড়া। শান্তিপুরের কাছেই রয়েছে  ফুলিয়া। বাংলা রামায়ণের রচয়িতা কবি কৃত্তিবাসের জন্মস্থান।


কৃষ্ণনগর: জলঙ্গী নদীর তীরে অবস্থিত কৃষ্ণনগর জেলা সদর। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নামে এই জায়গার নামকরণ করা হয়। এই রাজবাড়ি পর্যটকদের অন্যতম মূল আকর্ষণ। কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের জন্মস্থান কৃষ্ণনগর। খ্রিস্টান মিশনারিদের অন্যতম পছন্দের জায়গা ছিল কৃষ্ণনগর। এখানে রয়েছে একাধিক গীর্জা। ১৮৪০ সালে প্রোটেস্ট্যান্ট গীর্জা, ১৮৯৮ সালে  রোমান ক্যাথলিক ক্যাথিড্রাল তৈরি হয়। কৃষ্ণনগর বিখ্যাত মাটির পুতুল তৈরির জন্য। যার মূল কেন্দ্র হল ঘূর্ণি। ঘূর্ণির  শিল্পীরা তাঁদের শ্রেষ্ঠত্বের জন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছেন।


বেথুয়াডহরি: জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য ১৯৮০ সালে কেন্দ্রীয় সরকার বেথুয়াডহরি অভয়ারণ্য তৈরি করে। হরিণ, শেয়াল, সজারু ছাড়াও এখানে দেখা মিলবে টিয়া পাখি, কোকিল, এবংঅন্যান্য ছোট পাখি এবং পাইথন। দেখা যায় ছোট কুমিরও।


পলাশি: কৃষ্ণনগর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে পলাশির নামে রয়েছে ইতিহাসের পাতাতে। বাংলার শেষ স্বাধীন শাসক নবাব সিরাজ উদ-দৌল্লা নেতৃত্বে পলাশীর যুদ্ধ হয় ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন। ব্রিটিশদের জয়কে উল্লেখ স্মারক স্থাপন করা হয়েছিল। লর্ড কার্জনের পরবর্তী সময়ে তা নির্মাণ করা হয়েছিল।


বল্লাল ঢিপি: কৃষ্ণনগর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে এই বল্লাল ঢিপি। ১৯৮০ সালে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া খনন কাজ শুরু করে। ১৩ হাজার বর্গ মিটার সম্পন্ন এই ঢিপির উচ্চতা ৯ মিটার।


নদীয়া কীভাবে পৌঁছবেন?


আকাশপথে: কলকাতা বিমানবন্দরে এসে কলকাতা থেকে নদীয়া যাওয়া যেতে পারে।


রেলপথে: সবচেয়ে কাছের স্টেশন হচ্ছে কল্যাণী। এই স্টেশন কলকাতার সঙ্গে খুব ভালভাবেই সংযুক্ত।এছাড়াও


সড়কপথে: নদীয়ার শান্তিপুর, কৃষ্ণনগরের সঙ্গে সড়কপথে কলকাতা ও দেশের বাকি অংশেরও খুব ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা। কলকাতা থেকে শান্তিপুর ও কৃষ্ণনগরের একাধিক বাসও রয়েছে।


কোথায় থাকবেন?


স্টেশন থেকে বেরিয়েই একাধিক হোটেল, রিসর্ট নজরে পড়বে। খাওয়া-দাওয়ারও সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে।


আরও পড়ুন: Murshidabad Historical Places: এখানে গল্প বলে প্রাসাদের ইটও, নবাবের জেলায় ইতিহাসের রোমাঞ্চ