কমলকৃষ্ণ দে, আউশগ্রাম: রাজ্য জুড়ে ঘটা করে দুর্গাদুর্গাপুজো" href="https://bengali.abplive.com/topic/mahalaya" data-type="interlinkingkeywords">পুজোর (Durga Puja 2022) প্রস্তুতি চলছে। শহর কলকাতায় মহালয়ার দিনই ভিড় জমেছে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে। কিন্তু চারিদিকের এই রোশানাই পৌঁছয়নি ওঁদের কাছে। হাড়ভাঙা পরিশ্রম, ধুঁকতে থাকা শিল্পের জন্য় জীবন উৎসর্গ করলেও, এ বছর হাতখালি আউশগ্রামের ডোকরা শিল্পীদের (Dokra Art)। অন্য বছরে মণ্ডপ জানানোর সামগ্রী, দেবী প্রতিমা, রকমারি গহনা, ঘর সাজানোর সামগ্রী, উপহার বাবদ বরাতের জোগান দিতে নাওয়া-খাওয়ার সময় থাকত না। কিন্তু করোনার দুই বছর এবং চলতি বছরে হাত একেবারে খালি তাঁদের। মহালয়ার দিনও বরাতের আশায় প্রহর গুনছেন তাঁরা। 


উৎসবের রোশনাই থেকে বঞ্চিত ডোকরা শিল্পীরা


পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের দ্বারিয়াপুরে ডোকরা সামগ্রী বানিয়েই সংসার চলে শিল্পীদের। কিন্তু এ বছর পুজো প্রায় শুরু হয়ে গেলেও বরাত পাননি তাঁরা। পুজো আসতে আসতে সামান্য বরাতও কি মিলবে না, এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে ডোকরা শিল্পী জিতেন কর্মকার,শুভ কর্মকার এবং রাজেশ কর্মকারের মনে।


শিল্পীরা জানিয়েছেন, বছরের এই বিশেষ সময়টিতে বড় বড় মণ্ডপ থেকে বরাত আসে। দেবী প্রতিমা, রকমারি গহনা-সহ অন্যান্য ডোকরা সামগ্রীর বরাত আসে প্রচুর। কিন্তু এ বছর সামান্য বরাতও নেই। অথচ বছরের এই সময়টায় কাজ করে যে উপার্জন হয়, এতকাল তা দিয়েই সারা বছরের সংসার খরচ চলে যেত হেসেখেলে।  এ বছর হাত খালি থাকায়, সংসার চালানোই এখন দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁদের কাছে। সারাটা বছর কী ভাবে কাটবে, সেই চিন্তা গ্রাস করেছে সকলকে।


আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: ভিআইপি টানতে রাস্তা বন্ধ নয়, সুজিতের পর ফিরহাদকে নির্দেশ মমতার


অতিমারির জেরে গত দুই বছরে ডোকরা শিল্প আর্থিক ভাবে অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত। তার উপর পুজোর সময় বরাত না মেলায় শিল্প এবং শিল্পীরা আজ বিপন্ন। ইতিহাসবিদের মতে ডোকরার ইতিহাস বহু প্রাচীন। মহেঞ্জোদারোতে প্রাপ্ত নৃত্যরত নারীমূর্তি ডোকরা শিল্পেরই নির্দশন বলে মনে করা হয়। এ ছাড়া বিশিষ্ট সমাজতত্ত্ববিদ বিনয় ঘোষের 'বাংলার ডোকরা শিল্প ও শিল্পী জীবন' নামক একটি লেখা থেকে জানা যায়, প্রাক আর্য সময় থেকেই ডোকরা শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল। অগ্নিপুরাণ, মৎস্যপুরাণ থেকে শুরু করে রায়গুণাকর ভারতচন্দ্রের 'অন্নদামঙ্গলে'ও হদিশ মেলে ডোকরা শিল্পীদের। ডোকরা শিল্পের কদর রয়েছে গোটা বিশ্বে।


কথিত রয়েছে, ওড়িশার ধেনকানাল থেকে আটটি পরিবার চলে আসে আউশগ্রামের দ্বারিয়াপুরে। সেখানেই একটি পুকুরকে কেন্দ্র করে আস্তে আস্তে গড়ে উঠে ডোকরা শিল্পীদে আস্ত গ্রাম। বর্তমানে দ্বারিয়াপুরে ৭২টি শিল্পী পরিবার বাস করে। দ্বারিয়াপুরে মূলত দুই ভাবে ডোকরা সামগ্রী তৈরি হয়। অনেকে মাটির ছাঁচের উপর পিতল গলিয়ে অবয়ব তৈরি করেন। আবার অনেকে প্রথমে মোম এবং মাটি দিয়ে ছাঁচ তৈরি করে তরল পিতল ঢেলে দেন। এর পর মাটির ছাঁচ তৈরি করে ধুনো, মোম এবং তেলের মণ্ড তৈরি করে তার মধ্যে সূক্ষ্ম কারুকার্য করা হয়। সেগুলি শুকিয়ে গেলে তাতে মাটির প্রলেপ দিয়ে আগুনে পোড়ানো হয়। সেই সময় মোম এবং ধুনো গলে বেড়িয়ে গেলে সেখানে পিতল গলিয়ে ঢেলে দেওয়া হয়। পরে মাটি ভেঙে লোহার সরু কাঁটা দিয়ে ভিতরের মাটির মণ্ড বের করে দেওয়া হয়।


ডোকরা শিল্পের ঐতিহ্য রক্ষার দায় কার!


ডোকরার কাজ এ রাজ্যে মূলত বাঁকুড়ার বিকনা এবং পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের দ্বারিয়াপুরেই দেখা যায়। গত মাসেই এই দুই এলাকার ডোকরা শিল্প 'বাংলার ডোকরা' নামে জিআই সার্টিফিকেট পেয়েছে। কিন্তু এত কিছুর পরও সরকারি ভাবে ডোকরা শিল্পের প্রচার এবং মার্কেটিংয়ের ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে বলে দাবি শিল্পীদের। তাঁরা চান, রাজ্য সরকার ডোকরা শিল্পের প্রচার এবং প্রসারের লক্ষ্যে মার্কেটিংয়ের ব্যবস্থা করুক। তা হলেই ডোকরা শিল্প ঘুরে দাঁড়াবে বলে বিশ্বাস তাঁদের।