সুনীত হালদার, আশাবুল হোসেন ও সৌমিত্র রায়, কলকাতা: আটকে অ্যাম্বুল্যান্স (Ambulance)। থমকে একের পর এক দূরপাল্লার বাস। তীব্র গরম (Heat)। অনেকে অসুস্থ। জল নেই। খাবার নেই। পয়গম্বর-বিতর্কের জেরে হাওড়ার (Howrah) ডোমজুড় (Domjur)-সহ বিভিন্ন জায়গায় অবরোধের জেরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অবরুদ্ধ হয়ে রইল ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক। ১১ ঘণ্টার অবরোধে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হল সাধারণ মানুষকে।
কী ঘটেছে?
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় অবরোধ শুরু, তারপর শুধু প্রহর গোনা। সকাল গড়িয়ে দুপুর...বিকেল গড়িয়ে...রাত...তবু অবরুদ্ধ হয়ে রইল ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক। দিল্লির বিজেপি নেত্রীর মন্তব্যের বিরোধিতায় প্রতিবাদের নামে হাওড়ার ডোমজুড়ে দিনভর যা চলল, তার চূড়ান্ত দুর্ভোগের শিকার হলেন সাধারণ মানুষ।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা। মাথার ওপর আগুন ঝরানো রোদ্দুর। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা প্রায় ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস...আর আপেক্ষিক আদ্রতা প্রায় ৮৮ শতাশ। নাজেহাল অবস্থা। আর তারই মধ্যে হাওড়ায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ। কয়েক কিলোমিটার লম্বা ট্রাফিক জ্যামে নাকাল হাজার হাজার মানুষ। কেউ আসছিলেন কলকাতায় ডাক্তার দেখাতে, ব্যবসার কাজে কিংবা অফিসে কিন্তু হাওড়ায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে অবরোধের জেরে তাঁরা আটকে রইলেন ১০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে।
প্রায় দু’সপ্তাহ কয়েক আগে পয়গম্বর সম্পর্কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন দিল্লির বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মা। তারই প্রতিবাদে প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার দূরে...হাওড়ার নিবড়ায় বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে পথ অবরোধ শুরু করা হয়। সেইসঙ্গে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ-বিক্ষোভ। ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক একটি ফ্ল্যাঙ্ক সাঁতরাগাছি হয়ে চলে গেছে হাওড়া স্টেশন ও নবান্নের দিকে, অন্য রাস্তাটি দক্ষিণেশ্বর, ডানলপ হয়ে ঢুকেছে কলকাতায়। অবরোধের জেরে জাতীয় সড়কের দু’দিকের ফ্ল্যাঙ্কেই থমকে যায় গাড়ি। চূড়ান্ত বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ।
সন্ধে নেমে যাওয়ার পরও চলতে থাকে অবরোধ...আরও আরও বেশি করে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা, বয়স্ক, অপারেশন করিয়ে বাড়ি ফিরতে গিয়ে আটকে গেছে। একটানা এই অবরোধ তুলতে কোনও কড়া পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি পুলিশকে। পরে অবরোধ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা এদিন বলেন, "ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের নাম করে পথ অবরোধ করছে। দিল্লির ঘটনা নিয়ে বাংলার সাধারণ মানুষকে কেন ভোগাচ্ছেন? আমি চাইলেই তুলে দিতে পারি, কিন্তু ঝামেলা চাই না। বিজেপির প্রতিবাদ প্রতিবাদ করতে চাইলে ট্রেনে করে দিল্লি গিয়ে প্রতিবাদ করুন। মোদির পদত্যাগ চান।"
মুখ্যমন্ত্রীর অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধের পরও, অবরোধকারী পিছু হঠেননি। সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, "তৃণমূল জমানায় মানুষ শিক্ষা নিক, বুঝুন, এসব আমাদের সময়ে ছিল না।"
শেষ অবধি প্রায় ১১ ঘণ্টা পর ওঠে অবরোধ। কিন্তু, দিনের শেষে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে অবরোধ করে...সাধারণ মানুষের হয়রান করে, এ কেমন প্রতিবাদ?