রঞ্জিৎ হালদার, সোনারপুর: বকেয়া টাকা মেটানোর টোপ দিয়ে রাজপুর-সোনারপুরের(sonarpur) বাসিন্দাকে অপহরণের (kidnapping) অভিযোগ। হাওয়ালার মাধ্যমে মুক্তিপণ চোকানোর আশ্বাস অপহৃতের দিদির। ফাঁদে পড়লেন অপহরণকারীরা। ধৃত ৪। টানটান নাটক বিশাখাপত্তনমে (vizag)। উদ্ধার অপহৃত যুবক।


কী হয়েছিল?
গত ৯ জুন থেকে নিখোঁজ ছিলেন রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কিক্কালি আমিন। আদতে অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা হলেও গত চার-পাঁচ বছর ধরে দিদি উষারানির সঙ্গে সোনারপুরেই থাকেন কিক্কালি। উষারানির ব্যবসায় সাহায্য করেন। ভাইয়ের হদিস না পেয়ে তড়িঘড়ি সোনারপুর পুলিশের কাছে গিয়েছিলেন পঞ্চাশ বছরের প্রৌঢ়া। তার পরই নাটকীয় মোড়।
উষারানির অভিযোগ, কেউ বা কারা ভিডিও কল করে তাঁকে দেখিয়েছে কিক্কালিকে বেধড়ক মারধর করা হচ্ছে। এতেই শেষ নয়। ভাইয়ের মুক্তিপণ হিসেবে ৭০ লক্ষ টাকাও চেয়েছে এরা। তবে কি অপহরণ করা হয়েছে যুবককে? কে করে থাকতে পারে এমন কাজ?


রহস্য়ের খাসমহল:
ধীরে ধীরে রহস্য়ের খাসমহল খুলে যায় পুলিশের সামনে। প্রৌঢ়া জানান, ৯ জুন বকেয়া টাকা মেটানোর কথা বলে তাঁকে হাওড়া স্টেশন লাগোয়া একটি এলাকায় ডেকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তিনি না গিয়ে ভাইকে পাঠিয়ে দেন। তার পর থেকেই নিখোঁজ কিক্কালি। ধাঁধার কিছুটা উত্তর পরিষ্কার হয়। কিন্তু তার পর? কোথায় গেলেন যুবক? 
আশার আলো দেখা যায় অপহরণকারীদের ভিডিও কলে। জানা যায়, বিশাখাপত্তনমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে  কিক্কালিকে। তথ্যটি পেতে প্রৌঢ়া অপহরণকারীদের জানান, হাওয়ালার মাধ্যমে তিনি মুক্তিপণ পৌঁছে দেবেন। পুলিশের কথাতেই হাওয়ালার টোপ দেন উষারানি। এর পর দ্বিতীয় প্রস্তের নাটক। 


হাওয়ালা 'টোপ':
বিশাখাপত্তনমের দিকে  রওনা দেয় পুলিশের একটি দল। স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। সঙ্গে উষারানির সঙ্গেও টানা যোগাযোগ রেখে চলেন উদ্ধারকারীরা। প্রৌঢ়া অপহরণকারীদের সঙ্গে কী ভাবে কথা বলবেন, তা পুঙ্খনাপুঙ্খ বলে দিতে থাকে পুলিশ। এর পর ক্লাইম্যাক্স। হাওয়ালাদারের সঙ্গে যেখানে দেখা হওয়ার কথা ছিল, সেই লোকেশনের কথা প্রৌঢ়ার কাছ থেকে জেনে নিয়ে পৌঁছে যান উদ্ধারকারীরা। দুজনকে সেখান থেকেই গ্রেফতার করা হয়। তাঁদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে জানা যায়, কাছেই একটি গাড়ির মধ্যে আটকে রাখা হয়েছে কিক্কালিকে। সেই গাড়ি থেকে আরও দুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। উদ্ধার করা হয় যুবককে। চার জনকেই ট্রানজিট রিমান্ডে কলকাতা আনা হয়েছে।
কিন্তু এত কাণ্ড কেন? পুলিশ সূত্রে খবর, উষারানি টাকার বিনিময়ে তাঁদের চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু যে স্তরের চাকরি দেওয়ার কথা ছিল, তা দেননি। সেই কারণেই এত কাণ্ড? এখনও স্পষ্ট নয়। তবে উষারানির যে অর্থের বিনিময়ে নিয়োগের কাজ করেন সে কথা স্বীকার করেছেন। ভাইও মেনে নিয়েছেন দিদির ব্যবসার কথা। বাকিটা অবশ্য তদন্তের পরই জানা যাবে।


আরও পড়ুন:শৌচকর্ম সারতে বাড়ির বাইরে, হাতির মুখে পড়ে বেঘোরে মৃত্যু মহিলার, আহত স্বামী ও দুই শিশু