বাংলার জাতীয়বাদী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা চারুচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পরিবারের আবাসস্থলটি। এই বছর ৯৪ বছরে পড়বে চারুভবনের পুজো। বিপ্লবী চারুচন্দ্রের নামেই দক্ষিণ কলকাতার বিখ্যাত চারু মার্কেট। তাঁর নামাঙ্কিত কলেজও দক্ষিণ কলকাতায় বিশেষ পরিচিত। তাঁর নামাঙ্কিত বাড়ির পুজো আজও হয়ে আসছে আদি রীতিতেই। সেই সময় মা  দুর্গা বন্দনার মাধ্যমে যুবসমাজকে ভারতমাতার সেবায় উদ্বুধ করার লক্ষ্য নিয়েই এই পুজোর সূচনা। পরিবারের সদস্যরা বলেন, এই বাড়িতে পা রেখেছেন স্বয়ং নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু। ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সাক্ষী এই বাড়ি দেবী দুর্গা। আজও এই বাড়ির প্রতিটি ইটে যেন লেখা অনেক অনেক ইতিহাস। বন্দেমাতরম মন্ত্রে দেশের মানুষকে জাগরিত করতেই এই পুজো শুরু হয়। এই বাড়িতে এক সময় এসেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও। 





পরিবারের প্রবীণ সদস্য, চারুচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নাতি, ইন্দ্ররাজ চট্টোপাধ্যায় জানালেন, ষষ্ঠীতে বোধন হয় রীতি মেনেই। এই বংশের আদি বাসস্থান আউশগ্রাম। বর্ধমানের শিল্পী হরগোপাল সাহাই এই পরিবারের মূর্তি গড়েন। তিনি রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত। তিনি চারুচন্দ্র পরিবারের মাধ্যমেই কলকাতায় পরিচিতি পান। বাড়ির মেয়ের মতোই দেখা হয় দেবী দুর্গাকে। আর মহাষষ্ঠীর আগের দিন শিল্পীরা এসে দেবীর মৃন্ময়ী মূর্তিকে সাজিয়ে তোলেন নানা সজ্জায়। হাত লাগান বাড়ির লোকেরাও। সন্ধিপুজো হয় মহাসাড়ম্বরে। অপরাজিতার মালা পরানো হয় ঠাকুরকে।  ১০৮টি পদ্ম নিবেদন করে পুজো করা হয় মাকে। এই পরিবারে মাকে নিবেদন করা হয় নিরামিষ ভোগই। মায়ের সঙ্গে বাড়ির লোকেরাও নিরামিষ ভোজন করেন ষষ্ঠী থেকে নবমী। দশমীতে মাছ ভাত খেয়ে প্রতিমানিরঞ্জনে যান পরিবারের লোকেরা। পরিবারে নাড়ু তৈরি হয় বাড়ির গাছের নারকেল থেকেই। এখন চট্টোপাধ্যায় পরিবার লতায় পাতায় বহুদূর বিস্তৃত। তবু বাড়ির পুজো মানেই সকলের হাজির হওয়া চাই। পরিবারের সদস্যরাই পুজোর আয়োজন করে থাকেন। বলি হয় সন্ধিপুজোয়। শশা-চালকুমড়ো-আখ বলি হয়। আর নবমীতে হয় বিশেষ কুমারী পুজো। বাড়িতে একসঙ্গে ৬-৭ জন কুমারীকে পুজো করা হয়। সে এক দেখার মতো বিষয়। বিজয়ার দিন সিঁদুর খেলা খুব বড় মাপে আয়োজিত হয়ে থাকে।