অরিন্দম সেন, আলিপুরদুয়ার : ঐতিহ্য এবং বনেদিয়ানা আজও অনেকটাই বিদ্যমান আলিপুরদুয়ার পলাশবাড়ি গ্রামের ভুইঞা পরিবারের পুজোয়। বৈচিত্রে ভরা এই পুজো এবার ১৭৫ বছরে পদার্পন করল।
"ভুইঞা" নামটার সাথে ইতিহাস জড়িত। অবশ্যই এরা ইতিহাসে বর্ণিত ১২ ভুইঞাদের এক বংশধরের পরিবার বলেই পরিচিত। জানাযায়, ১৭৫ বছর পূর্বে বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার কেদারবাড়ি গ্রামে স্বপ্নাদেশে এই পূজোর সূচনা হয় । পরবর্তীতে দেশভাগের পর তারা আলিপুরদুয়ারের পলাশবাড়ি গ্রামেই স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে রয়েছেন। সেই হিসেবে তাদের এই পারিবারিক পুজো এবার ১৭৫ বছরে।
কাঠের ঘরের দালান থেকে পুজো মণ্ডপ, সবেতেই এখনও রয়েছে সাবেকিয়ানার ছাপ। বাংলাদেশের সেই শাল কাঠের কাঠামোতেই এখনও হয়ে আসছে পুজো। স্বপ্নে দেবী এখানে লাল বর্ণে দেখা দেন। তাছাড়াও কার্তিক, গনেশের স্থানও পরিবর্তন হয়েছে এখানে। পুজোর সাজ-সরঞ্জামেও সেই ঐতিহ্যই বহন করে আসছেন তারা । পুজোর বাসন থেকে শুরু করে পুজোতে ব্যবহৃত চামর, পাখা, সবই পুরনো আমলে রুপো দিয়ে তৈরি সামগ্রী। যা তাদের ঐতিহ্যকে বহন করে। মহালয়ার দিন ঘট বসে, শুরু হয় চণ্ডীপাঠ। তবে পুজোয় এখানে রান্না করা ভোগ দেবারও রীতি নেই তাদের । চলছে পূজোর প্রস্তুতি। ভুইঞাদের এই যৌথ পরিবারের সব সদস্যদে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যাস্ত। যদিও কোভিড পরিস্থিতিতে বাইরে থেকে অনেক আত্মীয়স্বজন এবারেও পুজোর আনন্দ থেকে বঞ্চিত থেকে যাবেন। তবে এই পুজোকে কেন্দ্র করে গ্রামের মানুষের উপস্থিতি কিছুটা হলেও ঘুচিয়ে দেবে আত্মীয়দের অনুপস্থিতির দুঃখকে।
আজ সপ্তমী৷ লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ, কার্তিককে নিয়ে সপরিবারের দুর্গার বাপের বাড়িতে আসার দিন। ভোরে গঙ্গার ঘাটে নবপত্রিকা স্নানের পর দেবীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়েছে। তারপর শাস্ত্রমতে ষোড়শ উপাচারে শুরু হয়েছে সপ্তমীর পুজো। নবপত্রিকা শব্দটির আক্ষরিক অর্থ ন’টি গাছের পাতা। তবে বাস্তবে নবপত্রিকা ন’টি পাতা নয়, ন’টি উদ্ভিদ। কৃষিপ্রধান বাংলার প্রতীক। এগুলি হল, কলা, কচু, হলুদ, জয়ন্তী, বেল, ডালিম, অশোক, মান ও ধান। করোনা আবহে যাবতীয় সতর্কতা মেনেই মণ্ডপে মণ্ডপে দেবীর আবাহন। সাবেকিয়ানা থেকে থিম, উত্সবের রোশনাই বাংলা জুড়ে।