ঋত্বিক প্রধান, সর্দার সামদাসবাড়(পূর্ব মেদিনীপুর) : সমুদ্র উপকূলের সর্দার সামদাসবাড়ের দাস পরিবারের পুজো ঘিরে রয়েছে অনেক জনশ্রুতি। স্বপ্নাদেশে প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো এই পুজোর প্রবর্তন করেছিলেন তৎকালীন দাস পরিবারের নন্দ দুলাল দাস। কথিত আছে, মায়ের নির্দেশে সমুদ্র উপকূলে জঙ্গল পরিষ্কার করে পুজো শুরু হয়েছিল। মায়ের নির্দেশে বহু বছর ধরে মহাসমারোহে পটচিত্রের পুজো হত, যা এখন বিষ্ণু সিংহবাহিনী দুর্গা নামে পরিচিত।
দাস পরিবারের কুল দেবতার মন্দিরে মা সিংহবাহিনী দুর্গা অধিষ্ঠিত। বহু বছর ধরে পটচিত্রের পুজো হওয়ার পর ফের মায়ের স্বপ্নাদেশে মূর্তি গড়ে পুজো শুরু হয়। এই পুজো বৈষ্ণব মতে হওয়ার কারণে পশু বলি প্রথা প্রথম থেকেই নেই। তবে আখ, চাল কুমড়োর বলি এখনও হয়ে থাকে।
দাস পরিবারের পুজোর হোম-যজ্ঞ নিয়ে রয়েছে অনেক চমক। আতস কাঁচ সূর্যের আলোয় পেতে হোম যজ্ঞের অগ্নি সংযোগ ঘটানো হয় যা আজ পর্যন্ত চলে আসছে। হোম-যজ্ঞে আগে প্রায় এক মন ঘি পোড়ানো হত। এখন তা কমে গিয়ে কেজিতে রূপান্তরিত হয়েছে। জনশ্রুতি আছে, মা দুর্গা সমুদ্র থেকেই গভীর রাতে সোজা উঠে আসতেন পুজোস্থলে। এখন সমুদ্র অনেকটা পিছিয়ে যাওয়ায় ঘটোত্তলন হয় বনেদি বাড়ির দিঘিতে। দাস পরিবারের জাগ্রত এই মায়ের কাছে মানত করে আজ পর্যন্ত কেউই বিফল হননি। মা সকলেরই মনোবাসনা পূরণ করে থাকেন। তাই দূর-দূরান্ত থেকে ফি বছর হাজার হাজার ভক্ত মায়ের কাছে ভিড় জমাতে একেবারেই ভোলেন না।
আরও পড়ুন ; দেবী দুর্গার দর্শন পেয়েছিলেন বাড়ির কর্তা! ২৫০-এর পুজোর প্রস্তুতি চণ্ডীতলা জনাই রাজবাড়িতে
আগে পুজোর পাঁচ দিন ধরে আশপাশের পাঁচটি গ্রামের মানুষ পাত পেড়ে মায়ের প্রসাদ খেতেন। এখন সেই পাঁচদিনের বদলে একদিন গোটা গ্রামের মানুষজনকে খাওয়ানো হয় প্রসাদ। পুজোয় পাঁচ দিন ধরে বসত মেলা। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে সেই মেলা গত বছর থেকে বন্ধ করা হয়েছে।
বর্তমান দাস পরিবারের সদস্য সংখ্যা শতাধিক। পুজোর ক'টা দিন কর্মসূত্রে যে যেখানেই থাকুক না কেন, এই ক'দিন সকলে একত্রিত হয়ে আনন্দে মেতে ওঠেন। দাস পরিবারের এই পুজোর অপেক্ষায় সারা বছর প্রতীক্ষায় থাকেন এলাকার বহু মানুষ।