তুহিন অধিকারী, বিষ্ণুপুর (বাঁকুড়া) : ১০২৪ বছর আগে প্রাচীন মল্ল রাজধানী বিষ্ণুপুরে এক দৈব ঘটনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল মৃন্ময়ীর পুজো। তারপর বিষ্ণুপুরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া দ্বারকেশ্বর নদ দিয়ে বয়ে গেছে বহু জল। কালের নিয়মে হারিয়ে গেছে দাপুটে মল্ল রাজাদের রাজ্যপাট। কিন্তু প্রাচীন সেই রীতি মেনে আজ একের পর এক মোট ন’বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে সূচিত হল দেবী মৃন্ময়ীর পুজো। আর তার সাথে সাথেই প্রাচীন মল্ল গড়ে শুরু হয়ে গেল দুর্গাপুজো।
সময়টা ৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ। মল্ল রাজত্বের তৎকালীন রাজধানী প্রদ্যুম্নপুর থেকে শিকারের লক্ষে বেরিয়ে বাঁকুড়ার বন বিষ্ণুপুরে আসেন রাজা জগৎমল্ল। কথিত আছে, আজ যে জায়গায় মৃন্ময়ী মন্দিরের অবস্থান সেখানেই একটি বটগাছের নিচে ক্লান্ত হয়ে বসে পড়েছিলেন রাজা জগৎমল্ল। তারপর একের পর এক দৈব ঘটনা ঘটতে থাকে রাজা জগৎমল্লর সঙ্গে।
আরও পড়ুন ; মল্ল রাজার থেকে প্রাপ্ত জমিদারি, পুরনো রীতি মেনেই পুজোর আয়োজন মণ্ডলদের
কথিত আছে, একাধিক দৈব ঘটনার সম্মুখীন হওয়া রাজা জগৎমল্লর সামনে দেবী মৃন্ময়ী আবির্ভূত হয়ে ওই বট গাছের নিচে তাঁর মন্দির স্থাপনের নির্দেশ দেন। এরপর রাজা জগৎমল্লর উদ্যোগেই তৈরি হয় মৃন্ময়ীর মন্দির। ধীরে ধীরে প্রদ্যুম্নপুর থেকে মল্ল রাজাদের রাজধানী সরে আসে বন বিষ্ণুপুরে। মৃন্ময়ী মন্দিরের অদূরেই তৈরি হয় রাজ প্রাসাদ। মৃন্ময়ীকেই কুলদেবী হিসাবে গ্রহণ করে মল্ল রাজ পরিবার। ধুমধাম করে শুরু হয় মৃন্ময়ীর পুজো। রাজার পুজো। তাই কালের অমোঘ নিয়মে এই পুজোর রীতি নীতি ও আচারে মিশে গেছে প্রাচীনত্ব ও আভিজাত্য।
কিন্তু আজ থেকে ১০২৪ বছর আগে যে বলি নারায়ণী পুঁথি অনুযায়ী শুরু হয়েছিল মৃন্ময়ীর পুজো, আজও সেই নিয়ম রয়েছে অব্যাহত। আজও নিয়ম মেনে জীতাষ্টমীর পরের দিন অর্থাৎ আজ নবমীর পুণ্য লগ্নে স্থানীয় গোপাল সায়ের থেকে প্রাচীন মৃন্ময়ীর মন্দিরে আনা হল বড় ঠাকুরানিকে। এই বড় ঠাকুরানি আসলে মহাকালী। রীতি মেনে গোপাল সায়েরে বড় ঠাকুরানি-রূপী পটকে পুজো করে আনা হল মন্দিরে। সুপ্রাচীন রীতি মেনে দেবীর আগমনী বার্তা ঘোষিত হয় ন’বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে। নিয়ম মেনে এরপর প্রতিদিন মন্দিরে পুজিতা হবেন বড় ঠাকুরানি। এরপর দুর্গা ষষ্ঠীতে মন্দিরে আসবেন মেজ ঠাকুরানি অর্থাৎ মহা লক্ষ্মী ও ছোট ঠাকুরানি অর্থাৎ মহা সরস্বতী।