অমিতাভ রথ, ঝাড়গ্রাম: ঝাড়গ্রামের পর্যটন মানচিত্রে এক উল্লেখযোগ্য নাম  লালজল। কিন্তু দুর্গাপুজোর জনপ্রিয়তায় এখনও এই নাম অশ্রুতই। কিন্তু এর ইতিহাস গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতো।  


বেলপাহাড়ির জঙ্গলঘেরা এক পাথরের পাহাড়। তার মধ্যে এক গুহা। আদিম মানবগুহা বলেই সাধারণভাবে এটি পরিচিত। এই গুহার মানুষের ব্যবহারিক বেশ কিছু জিনিষও উদ্ধার হয়। মনে করা হয় প্রাচীন মানবরাই তা ব্যবহার করত। কথিত আছে, এই গুহায় নাকি মা দুর্গার মূর্তিও আছে। স্থানীয়দের কাছে শোনা যায়, এক সাধু এই গুহায় বসে ধ্যান করতেন। পাশে তাঁর হিংস্র বাঘও থাকত। তবে তার যথাযথ প্রমাণ নিয়ে এখনও অনেক প্রশ্ন রয়েছে। এই গুহার ইতিহাস জানতে প্রত্নতাত্ত্বিকরা যখন দুর্গামূর্তির জন্য খননকার্য শুরু করেছিলেন, শোনা কথা, তখন এক বিষধর সাপ তাদের সামনে রুখে দাঁড়ায়। 


আরও পড়ুন, কলকাতায় এবার 'সবচেয়ে দামি প্যান্ডেল', নয়া থিমে সাজছে ৬৪ পল্লী




এরপর আর কেউ খনন করার সাহস দেখায়নি। জানা যায়, সেই সাধুই প্রথম এখানে দুর্গাপুজার প্রচলন করেন। পরবর্তীতে তিনি লালজল গ্রামবাসীদের বলে যান যে কোনো অবস্থাতেই যেন পুজো বন্ধ না হয় এই গুহায়। গ্রামবাসীরা জানান যে একবার পুজো বন্ধ ছিল এই গুহায়, সেই সময় আচমকাই ফের মাওবাদী অশান্তি নেমে আসে গ্রামে। 


জঙ্গলমহলে প্রথম পুলিশ খুন হয় এই লালজলে। রক্তক্ষয়ী ভয় গ্রাস করতে শুরু করে গোটা গ্রামকে। স্থানীয়দের কথায়, সে বছর ফের মনে পড়ে সাধুর সতর্কবাণী। এরপর আর লালজলে পুজো বন্ধ করেনি গ্রাম বাসীরা। তাঁদের দাবি পুজো শুরুর পর থেকেই তাঁদের জীবন স্বচ্ছন্দে রয়েছে।




কোথায় এই দেবী দুর্গার অবস্থান? লালজল পাহাড়ের ওপর রয়েছে একটি গুহা। তার ঠিক একধাপ নিচে রয়েছে দুর্গা মন্দির। আর পাহাড়ের কোলে সাধু বাবার জন্য একটি আশ্রমও গড়ে তোলা হয়েছিল। সেখানেই হয় নিত্য পুজো। পুজোর তিন দিন ধুমধাম করেই দেবী বন্দনা চলে। বিশেষ করে নবমীর দিন বাসন্তী পুজোরও আয়োজন হয়। সেদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে ভক্তদের আনাগোনা। পাশ্ববর্তী রাজ্য থেকেও ভক্তরা আসে। এই পুজোকে কেন্দ্র করে মেলাও বসে ওই এলাকায়। গ্রামের সমস্ত পুরুষ মহলা মাথায় ঘট নিয়ে ঢাকঢোল বাদ্য সহযোগে গ্রাম প্রদক্ষিণ করে। 


আরও পড়ুন, উদ্যোক্তা গ্রামবাসীরাই, খয়রাশোলের ১৫০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজোর নেপথ্যে এক অজানা ইতিহাস






লালজল পাহাড়ের উপর থেকে অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্যর সঙ্গে পুজোর আমেজে একাকার হতে ভিড় জমায় ভক্তরা। যদিও লাল জলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে সারা বছরই ভিড় লেগে থাকে। করোনার প্রভাব কমতেই ভিড় বাড়তে শুরু করে এখানে। করোনার প্রভাব কাটিয়ে এবার তাই পুজোর জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত হচ্ছে লালজল।