বিটন চক্রবর্তী, পূর্ব মেদিনীপুরঃ যুগ যুগ ধরে সম্প্রীতির মেলবন্ধনে হয়ে আসছে নন্দকুমারের মা বর্গেশ্বরী পূজোয়। নবমীর দিন প্রসাদ হিসেবে মাকে দেওয়া হয় গুড়পিঠে। কথিত আছে ১৭৪০ খৃষ্টাব্দে মারাঠা অশ্বারোহী দুর্ধর্ষ বর্গীরা কংসাবতী নদী অতিক্রম করার উদ্দেশ্যে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমারের বরগোদা গ্রামে অস্থায়ী সৈন্য শিবির স্থাপন করে। তাঁদের আগ্রহেই তখন প্রতিষ্ঠিত হয় দেবী বর্গেশ্বরী মন্দির। তখন থেকেই মায়ের আরাধনা শুরু হয়। কথিত আছে মা বর্গভীমার ভগিনী মা বর্গেশ্বরী। সম্প্রতির মেলবন্ধনে যুগ যুগ ধরে এই পূজো হয়ে আসছে। মন্দিরের একশো মিটারের মধ্যে রয়েছে একটি মাজার।
উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ এখানে পরস্পরের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। অষ্টমীর দিন যারা মায়ের কাছে পুষ্পাঞ্জলি দিতে আসে তাঁদের হাতে এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষরা কিছু ফলমূল তুলে দেয়। এটাও হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। আর নবমীর দিন মাকে দেওয়া হয় গুড়পিঠে। এই প্রসাদ পাওয়ার জন্য ভিড়ও হয় খুব। সাতটি গ্রাম, বরগোদা, বাবুলপুর, চকজিয়াদিঘি, ভবানীচক, পাঁচবেড়িয়া, পেঁয়াজবেড়িয়া, রাম ভদ্রেশ্বরের বাসিন্দারা এই পূজো করে আসছেন। সপ্তগ্রাম নামে এদের একটি পূজো কমিটিও রয়েছে। প্রাচীন এই পূজোকে ঘিরে সমস্ত ধর্মের মানুষ একাত্ম। স্থানীয় বিধায়ক সুকুমার দে বলেছেন, ''এই পূজো যাতে হেরিটেজের তকমা পায় তার জন্য সচেষ্ট হয়েছেন তাঁরা।''
রাজ্যের অন্য প্রান্তে বসিরহাটের ভেবিয়ার দে বাড়ির পুজো এবার পা দিল ১১৫ বছরে। করোনা বিধি মেনে চললেও, ভাটা পড়েনি পুজোর রীতিতে। ভিন রাজ্য থেকে এসেছেন পরিবারের সদস্যরা।
বোধনতলায় পুজো। কলাবউ স্নান দিয়ে উমার প্রাণ প্রতিষ্ঠা। রীতি মেনে সপ্তমীর পুজো হল উত্তর ২৪ পরগনার ভেবিয়ার দে বাড়িতে। করোনা আবহে কীভাবে পুজো হবে, তা নিয়ে একটু চিন্তায় ছিলেন সবাই। তার পরেও এই ক’টা দিনের টানে, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চলে এসেছেন দে বাড়ির সদস্য ও আত্মীয়স্বজনরা।