অমিত জানা, সবং: পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ের ভুঁইয়া বাড়ির পুজো। এখানে দেবী-আরাধনায় মিশে রয়েছে ঐতিহ্য, সাবেকিয়ানা। শুধু জমিদার বাড়ির সদস্যরাই নয়, পুজোর কটা দিন আনন্দ-হুল্লোড়ে মেতে ওঠে স্থানীয়রাও। মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া এই বাড়ির দ্বাদশ জেনারেশন। এই পুজো তাঁরা চালিয়ে যাচ্ছেন সমস্ত পরম্পরা, রীতি মেনেই।


সেই সাড়ে তিনশো বছর আগের কথা। কথিত আছে, কন্দর্পনারায়ণ ভূপাল দাস ভুঁইয়া, বর্গীদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে কেলেঘাই নদীর পাড়ে বসবাস শুরু করেন। সেখানেই দুর্গা পুজো প্রচলন করেন। সেই সময় থেকেই, বংশ পরম্পরায় হয়ে আসছে, পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ের ভুঁইয়া বাড়ির পুজো।


এখানকার পুজোর বেশ কিছু বিশেষ রীতি প্রচলিত রয়েছে। এখানে পুজোতে গোটা চাল কুমড়ো দেওয়া হয়। বাইরের কোন মিষ্টান্ন ভোগ দেওয়া হয় না। বাড়িতেই বানানো হয় মিষ্টান্ন ভোগ। নবমীতে কুমারী পুজো করা হয়। আরও একটি প্রথা রয়েছে। বিসর্জনের দিন কাদা খেলা হয়। 


ভুঁইয়া বাড়ির সদস্য রবীন্দ্রনাথ ভৌমিক বলেন, 'আনুমানিক ৩৬৬ বছর ধরে এই পুজো চলে আসছে। শুধু দুর্গাপূজা নয় শ্যামসুন্দরপুর জীউ পুজো এই মন্দিরে হয়। আমাদের বাড়িতে প্রত্যেকদিন শ্যামসুন্দরের পুজো হয়। পুজোর কটা দিন এই মন্দিরে শ্যামসুন্দর জীউ পুজো হয়।' বাড়ির আরেক সদস্য মানসী ভৌমিক বলেন, 'কূল দেবতার কাছে যাঁরা মানত করেন তাঁরা ফল পান। বাইরের কোনও মিষ্টান্ন ভোগ দেওয়া হয় না, বাড়িতে বানিয়ে দেওয়া হয়। কেলেঘাই নদীতেই ঘটত্তোলন  হয়। বিজয়া দশমীতে বিসর্জনের দিন কাদা খেলা হল বড় আনন্দের।'


স্থানীয়দের বিশ্বাস, দেবীর কাছে যাঁরাই মানত করেন তাঁদের মনস্কামনা পূর্ণ হয়। তাই বাড়ির পুজো হলেও এলাকার মানুষজন পুজোর কটা দিন ভিড় জমান দীর্ঘদিনের ভুঁইয়া পরিবারের এই পুজোতে।


আজ নবমী। হোমাগ্নিতে দেবীর স্তুতি। বনেদি বাড়িতে প্রথা মেনে নবমীর বিশেষ পুজো। কোথাও হোম, কোথাও ফল বলি। পুজো শুরুর সময় যেমন সঙ্কল্প, তেমনই পুজো শেষের প্রক্রিয়া দক্ষিণান্ত। নানা উপাচারে দেবীর আরাধনা। 
নবমীতেও কুমারী পুজো হয়। 


এরই মাঝে বাঙালির প্রাণের উত্সবে বিষাদের সুর। কাতর প্রার্থনা, না পোহায় যেন নবমী নিশি৷ করোনা-উদ্বেগকে পিছনে ফেলে এবার মণ্ডপে মণ্ডপে ভিড় করেছে মানুষ। প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরে চলেছে দল বেঁধে ঠাকুর দেখা। 


এরই মাঝে প্রতিবারের মতো মাকে আরও কিছুদিন রেখে দেওয়ার বাসনা নিয়েই বিসর্জনের প্রহর গোনা শুরু।