কলকাতা : ঝমঝমে বৃষ্টি চলছে। পা ডুবছে কাদায়। বৃষ্টির মধ্যে একটু জুবুথুবু পরিবেশ। তারই মধ্যে চলছে অবিরাম ঘোষণা। যাদের যাদের ভ্যাকসিনের ডোজ (Corona Vaccine) নেওয়া বাকি আছে, দুপুর তিনটের মধ্যে এসে নিয়ে যান। একে একে মাস্ক পরে কয়েকজন করে হাজির হচ্ছেন ভ্যাকসিন নিতে। 

করোনা (Coronavirus)পরিস্থিতিতেই ধীরে ধীরে খুশির মুখ দেখছে কুমোরটুলি। মাঝ বছরের খরা কাটিয়ে শরতের আকাশের মতোই হাসতে শুরু করেছে পটুয়াপাড়া। পুজোর অর্ডার (Durga Puja 2021) , বিক্রিবাটা অন্যান্য বারের তুলনায় কম নিঃসন্দেহে। তারই মধ্যে খুশির রসদ কুঁজে নিচ্ছে  কুমোরটুলি (Kumortuli)। করোনার আতঙ্কে ক্রেতারা যাতে কুমোরটুলিতে পা রাখতে ভয় না পান, সেই কথা ভেবেই আগেভাগে পুরো পাড়াটিকে স্যানিটাইজ করেছে কুমোরটুলি কর্তৃপক্ষ। একবার নয়, বারবার। মাঝে মাঝেই প্রতিটি ওয়ার্কশপ স্যানিটাইজ করা হচ্ছে। যেমন হবে গণপতি আরাধনার পরদিনই। জানালেন কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী সংস্কৃতি সমিতির সম্পাদক বাবু পাল । গণেশপুজোর আগে বহু মানুষের সমাগম হয়েছে পটুয়াপাড়ায়। তাই উত্সবের পরদিনই হবে স্যানিটাইজেশেন। 

আরও পড়ুন :


Ganesh Chaturthi Exclusive : গণেশ চতুর্থীর আগে কুমারটুলির অলি-গলিতে এবিপি লাইভ



কার্যত লকডাউনে দীর্ঘদিন বন্ধ লোকাল ট্রেন পরিষেবা। বাস চলাচলেও ছিল নিয়ন্ত্রণ। তাই গ্রামগঞ্জ থেকে শ্রমিকরা আসতে পারেননি বহুদিনই। কিছুটা শঙ্কা ছিল স্থানীয় কারিগরদের মনেও। যদি বাইরে থেকে আগতদের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ ছড়ায় ! তাই আগে ভাগেই বিধায়ক চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও স্থানীয় কাউন্সিলরের উদ্যোগে কুমারটুলি শিল্পী, তাঁদের পরিবার ও বাইরে থেকে আগত সব শ্রমিকদের ভ্যাকসিনেশনের ব্যবস্থা করা হয়। কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী সংস্কৃতি সমিতির সম্পাদক বাবু পাল জানালেন, জুন মাসে করোনাগ্রাফ যখন তুঙ্গে, তখন কুমোরটুলির শিল্পী, পালমশাইদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ফাউন্ডেশনের তরফে। এরপরে এই উদ্যোগে তাঁরা পাশে পান বিধায়ক চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে। ইতিমধ্যেই ভ্যাকসিনের দুটি ডোজই পেয়ে গেছে পটুয়াপাড়ার বেশির ভাগ কর্মীই। বাবু পালের কথায়, প্রায় ৯০ শতাংশ প্রতিমাশিল্পীরই ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ কমপ্লিট হয়েছে। কুমোরটুলিতে শ্রমিক বাইরে থেকে এসে কাজ করেন ১৭০০-১৮০০ জন। তাঁদের সিমহভাগেরই করোনার ভ্যাকসিন নেওয়া হয়ে গিয়েছে। আর প্রতিমাশিল্পীদের প্রায় সকলেরই ভ্যাকসিন নেওয়া হয়ে গিয়েছে। 

শিল্পী সুস্মিতা রুদ্র পাল মিত্র জানালেন, শিল্পী পরিবারের প্রত্যেককে ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে সমিতি। সেই সঙ্গে প্রথম থেকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মাস্ক ব্যবহার করার ক্ষেত্রে। সেই সচেতনতার ছবিই ধরা পড়ল এবিপি লাইভের ক্যামেরায়। সব বিক্রেতাদের মুখেই মাস্ক। ক্রেতা বা দর্শক ওয়ার্কশপে প্রবেশ করলেই তাঁদের মাস্ক পরতে বলা হচ্ছে। শিল্পীদের দাবি, দ্বিতীয় ঢোউ তেমন ভাবে আঘাত হানতে পারেনি কোনও শিল্পী পরিবারে। তবে ব্যবসায় যে আঘাত এনেছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে কোনও কোনও শিল্পী আবার মনে করছেন গণপতি উত্সব থেকেই ধীরে ধীরে বিক্রি বাড়ছে কুমোরটুলিতে। তাই করোনাসুর পুজোর আগেই বধ হবে আশায় পটুয়া পরিবারগুলি।