কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান : প্রতিপদে ঘটে জল পোড়ার মাধ্যমেই শুরু হয় c ( Durga Puja 2022 ) । রাজবাড়িতে মা দুর্গা পটে আঁকা। তাতেই হয় পুজো। নামেই রাজবাড়ি। রাজ অট্টালিকার প্রতিটি ইট এখন মলিন। বার্ধক্যের চিহ্ন অঙ্গে অঙ্গে।
জৌলুস কম, নিয়মে ছাড় নেই
ভগ্নপ্রায় নাট মন্দির। দেওয়ালের পলেস্তারা খসে পড়েছে। তবুও নিষ্ঠার সঙ্গে পূজিতা দেবী। বর্ধমান মহারাজের আমলে ধূমধাম করে পটেশ্বরী দুর্গাপুজো হত বর্ধমান রাজবাড়িতে। তবে এখন তা কিছুটা হলেও মলিন হয়েছে। কমেছে জৌলুস। আগে বহু মানুষের আগমন হত বর্ধমান মহারাজের তৈরি লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ ঠাকুরের বাড়িতে। দূর দূরান্ত থেকে অনেক মানুষজন পায়ে হেঁটে, গরুর গাড়িতে আসতেন এই মন্দিরে পুজো দেখতে। জাঁকজমকপূর্ণ ভাবেই হত পুজো।
রাজ পরিবারের নিয়মরীতি
পরিবারের প্রথা অনুযায়ী রাজ পরিবারের মহিলারা সবার সামনে আসতেন না। রাজবাড়ি থেকে গোপন রাস্তা দিয়ে তাঁরা এই মন্দিরে প্রবেশ করতেন এবং মন্দিরের দোতলায় আড়াল থেকে মাধ্যমে পুজো ও নানান অনুষ্ঠান দেখতেন তাঁরা। মন্দিরে থাকা দর্শনার্থীরা রাজ পরিবারের মহিলাদের দেখতে পেতেন না। এখনও হয় দুর্গাপুজো। ভিড়ও হয়। যদিও মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণের অভাব রয়েছে। করোনার প্রকোপে গত দু'বছর মন্দিরে সাধারনের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। তবে জৌলুস কমলেও পুজোর আচার, রীতিনীতিতে কোনও পরিবর্তন হয়নি। এখনও আগের মতো পুরনো রীতি মেনেই রাজপরিবারে পুজো হয় দেবী পটেশ্বরীর। দুর্গাই এখানে পটেশ্বরীর নামে পূজিত হন।
দশভূজার একচালার পটের মূর্তি
মহালয়ার পরের দিন থেকেই বর্ধমানের মহারাজার মন্দিরে দুর্গাপুজো শুরু হয়। পুজোর সময় রাজপরিবারের বংশধর প্রণয় চাঁদ মহাতাব সস্ত্রীক উপস্থিত থাকেন। শোনা যায়,পটেশ্বরী দুর্গাপুজো শুরু করেন তৎকালীন বর্ধমানের মহারাজ মহাতাব চাঁদ। কাঠের কাঠামোর উপর নানান রং দিয়ে নিপুণ তুলির টানে তৈরি হয় দশভূজার একচালার পট।
একটি চোখ দেখা যায়
এখানে একমাত্র গণেশ ছাড়া দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক এবং অসুরের মুখের ছবি এমনভাবে আঁকা আছে যেখানে শুধুমাত্র একটি চোখ দেখা যায়। শুধু তাই নয় মা দুর্গার বাহন সিংহের জায়গায় আঁকা আছে ঘোড়ার ছবি। ১২ বছর অন্তর একবার রঙ করা হয় পটেশ্বরী দুর্গার। কিন্তু রঙের পর মা দুর্গার রূপের কোনও পরিবর্তন হয়না। দীর্ঘ বছর ধরে রূপ একই রয়েছে দেবীর। রাজার আমলের রীতিনীতি মেনেই লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দিরে মহালয়ার দিন থেকে দুর্গাপুজো শুরু হয় আজও। এখানে বলি প্রথা আছে। তবে মহিষ বা ছাগ বলি হয় না। রাজাদের আমলে কুমড়ো বলি হত। এখন অবশ্য কুমড়ো বলির জায়গায় মণ্ডা বলি হয়। অষ্টমীর দিন পটেশ্বরীর সামনে নবকুমারী পুজো হয়।
এই মন্দির প্রতিষ্ঠা হবার আগে পাশের একটি মন্দিরে দেবী পূজিতা হতেন।পরে মহারাজ মহাতাব চাঁদ এই মন্দির তৈরী করেন।মন্দিরের সামনেই ছিলো নাটমন্দির। নবমীর দিন রাতে গুজরাতি সম্প্রদায়ের মানুষ এসে নাটমন্দিরে ডাণ্ডিয়া নৃত্য প্রদর্শন করেন, যা দেখতে ভিড় হয় বহু মানুষের। নাট মন্দিরের ভগ্নদশার কারণে সেই রীতি এখনও চালু আছে,নাট মন্দিরের বদলে মূল মন্দির প্রাঙ্গণে হয় ডাণ্ডিয়া নাচ।