কলকাতা: শেষ কবে রোগমুক্ত পুজো (Pujo 2022) দেখেছে এ শহর ? মনে করতে একটু সময় লাগে। একে কোভিড, তারপর এল ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। তবে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস আপতত এশহর থেকে বাক্সপ্যাটরা গোছালেও পুজোর আনন্দের মাঝে রীতিমত উপস্থিতি জানান দিচ্ছে আরও এক খলনায়ক, উমা মাকে। তিনি আর কেউ নন, ডেঙ্গি। ত্রিশুলের খোঁচায় হোক, কিংবা ধোঁয়ায়, মশা মারতে প্রতি বছর কম কসরত করে না পুরসভা (KMC)। তবুও কোভিডের দোসর ফের ডেঙ্গি (Dengue)। 


ডেঙ্গির মশাদের প্যান্ডেল হপিং রুখতে কী পদক্ষেপ কলকাতায় ?


তবে এখন আর শুধুই টায়ারের জমা জলে থেকে ঠিক জুতসই হচ্ছে না। একটু প্যান্ডেল হপিংও বোধয় চাই, ডেঙ্গির জীবাণু বহনকারী মশাদের। এদিকে, যে হারে বৃষ্টি হচ্ছে, প্যান্ডেলের সামনে বাঁশে খাজে দিব্যি সংসার পাতানো তোড়জোড় শুরু করেছে ! তবে হ্যাঁ, সব দিকেই নজর রয়েছে কলকাতা পুরসভার। মূলত জমা জলেই যে ডেঙ্গির মশাদের আঁতুর ঘর, এনিয়ে বহু সচেনতামূলক প্রচার হয় শহরে, জেলায়। অনেক সময় তা জানলেও আদতে হয়তো দৈনন্দিন জীবনে নানা চাপে খেয়াল হারিয়ে যায়। যার ফলও মারাত্মক। ডেঙ্গি আক্রান্ত হলে, শরীর বেশ ভালমতোই দুর্বল করে দেয়। সবথেকে বড় কথা প্রায় রাজ্যের অধিকাংশ মানুষের হয়েছে। যারা দাবি করেন, হয়নি, কিন্তু সর্দি-জ্বর হয়েছে। সে কথায় না যাওয়াই ভাল, কারণ আরটি-পিসিআর না করালে কেউ রোগ ধরতে পারবে না। তবে পোস্ট কোভিডে শরীরের ইমিউনিটি ব্যপকহারে কমেছে। আর তার উপর পুজোর মুখে ডেঙ্গি, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার স্কেলিটনে বড়সড় প্রভাব ফেলছে।


ডেঙ্গি বাড়লে ফের চাপ বাড়বে হাসপাতালগুলিতেও


সবথেকে বড় কথা পুজোর আনন্দের আগে টায়ারে যাও বা চোখ পড়ল, ততটা চোখ পড়ে না, লরি করে নিয়ে আসা, বাশ, থিম পুজোর ডেকরের্টসে। এমন অনেকই, প্লাস্টার অব প্যারিসের স্ট্রাকচার অনেকসময়ই মাঠের মধ্যে শোওয়ানো থাকে, যেখানে বৃষ্টির অ্যাসিডিক জল জমা হয়। এমন জায়গা ডেঙ্গির মশাদের লার্ভা জন্মানোর জন্য পারফেক্ট। তাই নজর এড়িয়ে গেলে বড়সড় মাশুল গুনতে হবে। এদিকে রাজ্যে ডেঙ্গি বাড়লে যে ফের টানাটানি পড়ে যাবে হাসপাতালগুলিতে , তা নিয়েও চাপানউতোর ওয়াকিবহাল মহলে। কারণ বিগতবছরে উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটির কথা এখনও খেয়ালে রয়েছে অনেকেরই। তাই আগের থেকে সচেতন সবাই। এখনও মনে মূলত পুজোর মুখে ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গি।রাজ্যে ক্রমেই বাড়ছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা।নির্মীয়মাণ মণ্ডপ থেকেই কি বিপদ বাড়ছে? প্যান্ডেলের বাঁশে জমা জলে ডেঙ্গির লার্ভা জন্মাতে পারে। আশঙ্কা প্রকাশ করে নজরদারির নির্দেশ দিল স্বাস্থ্যদফতর। নোটিস পাঠানো হল পুরসভার সব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। উদ্বেগ বাড়াচ্ছে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘ডেঙ্গি ৩’। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, শুধুমাত্র শুক্রবার ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছেন ৫৬৬ জন। রাজ্যে চলতি বছরে মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়েছে। স্বাস্থ্য কর্তাদের আশঙ্কা, নভেম্বরের আগে ডেঙ্গি থেকে রেহাই মিলবে না।


আরও পড়ুন, পুজোর মুখে আজ পেট্রোল-ডিজেলের কী দাম কলকাতায় ? রইল ১০ শহরের জ্বালানির দর


 ডেঙ্গি পরিস্থিতি যাতে হাতের বাইরে না যায়, শুরু থেকেই তাই মাঠে নেমেছে প্রশাসন। দফায় দফায় জরুরি বৈঠকে বসছে পুরসভা। বৈঠকে, নির্মীয়মাণ পুজো মণ্ডপগুলি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার।নির্মীয়মাণ মণ্ডপগুলির জন্য ব্যবহৃত কাটা বাঁশের খাঁজে বৃষ্টির জল জমে ডেঙ্গির লার্ভা জন্মানোর আদর্শ পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। তারপরই তত্‍পর হয় প্রশাসন।পুরসভার সব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নোটিস দিয়ে নির্মীয়মাণ মণ্ডপগুলিতে নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়।রবিবার উল্টোডাঙার শুঁড়ির বাগান সর্বজনীনের পুজো উদ্যোক্তাদের সঙ্গে নিয়ে মণ্ডপ পরিদর্শন করেন বরো চেয়ারম্যান ও পুরকর্মীরা। বাঁশে জমে থাকা জলে মশা মারার ওষুধ স্প্রে করা হয়। কলকাতার পাশাপাশি, ডেঙ্গি চিন্তা বাড়াচ্ছে জেলাতেও।বাঁকুড়া পুর এলাকায় এ পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছেন ৭৫জন, তার মধ্যে শুধু ১৯ নম্বর ওয়ার্ডেই আক্রান্তের সংখ্যা ৬০। রবিবার ৮ জন ডেঙ্গি আক্রান্তকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই অবস্থায় সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিত্‍সকরা।