নান্টু পাল, রামপুরহাট, বীরভূম: প্রায় নাকি সাড়ে তিনশো বছরের পুরনো দুর্গাপুজো। এখনও পুরনো প্রথা মেনেই পুজো হয়। পুজো উপলক্ষে মেতে ওঠেন পরিবারের সকলে। পুজোয় হাত লাগান স্থানীয়রাও। জায়গাটা বীরভূমের রামপুরহাটের কাছে খরুন গ্রামে রায় জমিদার বাড়ি নামেই পরিচিত।


দেবী প্রতিমার বিশেষত্ব:
বাংলার কোণায় কোণায় ছড়িয়ে রয়েছে একাধিক প্রাচীন ও বনেদি বাড়ির পুজো। প্রতিটিরই কোনও না কোনও বিশেষত্ব রয়েছে। খরুন গ্রামের রায় জমিদার বাড়িতেও রয়েছে এমন একটি বিশেষত্ব। আর তার পিছনে রয়েছে একটি বহু প্রাচীন লোককথা। তা সত্যিই গল্প নাকি সত্যি ঘটনা তা অবশ্য আর জানা যায় না। রায় জমিদার বাড়িতে মাটির মূর্তিতে পুজো হয় না। ধাতুর মূর্তিতেও হয় না। তার বদলে পুজো হয় শোলার মূর্তিতে।        


গ্রামের জমিদার রাম নিধি রায় ও রামকানাই রায় এই পুজো শুরু করেন বলে জানা যায়। কথিত রয়েছে, রায় বংশের এক কুমারী মেয়ে নাকি মন্দিরে মাটির  দেবীকে সন্ধ্যারতি করতে গিয়েছিলেন। তারপর ওই মেয়ে আর মন্দির থেকে বের হননি। পরে জমিদার বাড়ির লোক মন্দিরে ঢুকে দেখতে পান ওই কুমারীর পরিধেয় শাড়ির লাল পাড়ের অংশ বিশেষ। তারপর থেকেই নাকি মাটির বদলে কাগজের মূর্তির পুজোর প্রচলন হয়। রায়বাড়ির এই দেবীপ্রতিমার সঙ্গে কার্তিক-গণেশ নেই। সেভাবেই এখনও পুজো হয়ে আসছে। তবে এখন কাগজের বদলে দেবীর শোলার পটমূর্তি হয়ে থাকে। এই পুজোর আরও একটি বৈশিষ্ট্য হলো, সারা বছর পটের মূর্তি মন্দিরে থাকে এবং নিত্যপুজো হয়। মহালয়ার দিন বিকেলে সেই  একচালা পটমূর্তির নিরঞ্জন হয়। তারপর পিতৃপক্ষের শেষে  প্রতিপদের সূচনায় ঘটে জল ভরে এবং বলিদানের মধ্যে দিয়ে সেই বছরের পুজোর সূচনা হয়। ওই গ্রামে রায় বাড়ি ছাড়া আরও চারটি সাবেকি পূজা হয়। ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় ওই চার পুজো বাড়ির প্রতিনিধি রায় মণ্ডপে হাজির হন। তারপর সবাই  মিলে নব পত্রিকা নিয়ে দোলার ঘট ভরা হয়। 


সিঁদুর খেলাতেও অন্য নিয়ম:
এই পুজোর  আরও একটি  উল্লেখযোগ্য আকর্ষণ হল সিঁদুর খেলা। অধিকাংশ জায়গায় দশমীতে সিঁদুর খেলা হলেও, এখানে সপ্তমীতে সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠা হয়।


ভোগেও চমক:
জমিদার বাড়ির এখনকার সদস্য তরুণ কান্তি রায় বলেন, 'মায়ের তিন দিন ভোগ হয়। একদিন লুচি ও দুই দিন অন্ন ভোগ হয়। মায়ের ভোগে নবমীর দিন মাছ পোড়া ও মেটে ভাজা হয়। অষ্টমীর পুজোর ছাগ বলি হয়। সপ্তমী, নবমীতেও ওই বলি হয়। পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন, সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত  নাকি রায় বংশের কোনও বাড়িতে হাঁড়ি চড়ে না। পুজোর কদিন পরিবারের সব সদস্য এক জায়গায় পাত পেড়ে খান।


আরও পড়ুন:  দেবীকে তুষ্ট করতে বলি হয় ছাঁচি কুমড়ো, সিংহ এখানে ঘোটকরূপী