সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, হুগলি: পুজোর আর কদিন বাকি। অন্যত্র তুঙ্গে উঠেছে প্রস্তুতি। প্রায় শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি চলছে। কিন্তু পুজোর হাওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে হুগলির শেওড়াফুলি রাজবাড়িতে। সেখানে ইতিমধ্যেই প্রায় শুরু হয়ে গিয়েছে দুর্গাপুজো। কারণ এটিই নিয়ম শেওড়াফুলি রাজবাড়ির। অন্য জায়গায় যখন পুজো শুরু হয় তার প্রায় দিন পনেরো আগে শুরু হয়ে যায় বনেদি বাড়ির এই পুজো। 


দেবীর রূপ সর্বমঙ্গলা:
হুগলির শেওড়াফুলির রাজবাড়িতে দেবী সর্বমঙ্গলা রূপে পুজো করা হয় দেবী দুর্গার। স্থানীয়রা এবং ওই পরিবারের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, প্রায় পৌনে তিনশো বছর ধরে চলছে এই পুজো। এখনও প্রায় সব পুরনো রীতিনীতি এবং প্রথা মেনেই এই বাড়িতে পুজোর আয়োজন করা হয়। ইতিমধ্যেই ঘট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ওই বাড়ির দুর্গাপুজোর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। চণ্ডী পাঠের মধ্যে দিয়ে দেবীর ঘট প্রতিষ্ঠা হয়। এই বাড়ির পুজোর শুধুমাত্র দেবীর পুজো হয়। লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতীর পুজো এখানে হয় না। তবে রয়েছে অসুর। সিংহ এখানে ঘোটকরূপী।    


পুজোর রীতিনীতি:
বহু পুরনো নিয়ম মেনে কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথিতে শেওড়াফুলি রাজবাড়ির দুর্গাপুজো শুরু হয়। অষ্টধাতুর দেবী দুর্গার মূর্তিতে পুজো হয়। বাড়ির সদস্যরা জানাচ্ছেন, একাধিক রীতি নীতি মেনে এই পুজো হয়ে থাকে। এক সময় এই বাড়িতে বলি দিয়ে দেবীর পুজো করা হতো। ছাগ বলি দেওয়া হতো। কিন্তু এখন বলিপ্রথা উঠে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন বাড়ির সদস্যরা। এখন শেওড়াফুলি রাজবাড়িতে দেবী দুর্গার পুজো হয় বৈষ্ণব রীতি মেনে। এই বাড়ির পুজোয় শুধু ছাঁচি কুমড়ো বলি হয়। দেবী মন্দিরে একটি সিংহাসন রয়েছে। সেখানে রয়েছে মূর্তি। এই বাড়িতে দেবীর নিত্য পুজো হয়। রয়েছেন কৃষ্ণও। 


ইতিহাসের ছোঁয়া:
রাজা মনোহর রায়ের হাত ধরে এই বাড়ির পুজো এত বড় মাপের হয় বলে জানাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। আঁটিসারা গ্রামে এই পরিবারের জমিদারি ছিল। তখন পুকুর কাটার সময় মাটির তলা থেকে একটি মূর্তি উদ্ধার হয়। স্বপ্নে আদেশ পেয়ে তিনি সেই মূর্তি শেওড়াফুলি রাজবাড়িতে এই মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। ততদিনে সেই বাড়িতে লক্ষ্মী-জনার্দন প্রতিষ্ঠিত। তারপরে সেখানে দেবী সর্বমঙ্গলাকে প্রতিষ্ঠা করা হয়। তারপর থেকেই প্রতিদিন পুজো করা হয়।  জানিয়েছেন পরিবারের এক সদস্য আশিস কুমার ঘোষ। জোর সময়ে বাইরে থেকেও লোকজন আসেন। এখানে পুজো হয়, অঞ্জলি দেন। গত দুই বছর বাইরের কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়। এবার অবশ্য সবাইকে ঢুকতে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পরিবারের এক সদস্য আশিস কুমার ঘোষ। পুজোর কদিন একসঙ্গে হইহুল্লোড় চলে। আনন্দ হয়, পরিবারের সকলে এই কদিন একসঙ্গে থাকেন। জানাচ্ছেন পরিবারের এক সদস্য তপতী ঘোষ।  

আরও পড়ুন: রাজবাড়িতে যাতায়াত ছিল প্রফুল্ল চাকীর, গ্রেফতার হন রাজাও, অম্বিকানগরের পুজোর বয়স ৪৫০ বছর