দীপক ঘোষ, অর্ণব মুখোপাধ্যায় ও হিন্দোল দে, কলকাতা: কসবায় হিন্দু মহাসভার দুর্গাপুজো ঘিরে বিতর্ক। এই পুজোয় অসুরের চেহারা ছিল অবিকল মহাত্মা গাঁধীর মতো। জাতির জনকের জন্মজয়ন্তীতে এই ছবি সামনে আসার পরই আছড়ে পড়ে সমালোচনার ঢেউ। শেষমেশ বিতর্কের মুখে রাতে চুল, গোঁফ লাগিয়ে অসুরের চেহারা কিছুটা পাল্টানো হয়।


রবিবার ছিল মহাসপ্তমী। পাশাপাশি সেদিনই ছিল ২ অক্টোবর। অর্থাৎ জাতির জনক মহাত্মা গাঁধীর জন্মদিন। এই বছর ছিল মহাত্মা গাঁধীর ১৫৩তম জন্মদিবস। সেই উপলক্ষে দেশজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়েছে মহাত্মা গাঁধীকে। রাজঘাটে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন সনিয়া গাঁধী। সেই দিনই কলকাতায় একটি পুজো ঘিরে শুরু হয় শোরগোল।


কলকাতার রুবির মোড়ের কাছে কসবায় হিন্দু মহাসভার তরফে এই বছরেই প্রথমবার দুর্গাপুজোর আয়োজন করা হয়েছে। সেখানেই দেখা যায় দেবী দুর্গার পায়ের তলায় থাকা অসুরের চেহারা যেন মহাত্মা গাঁধীর মতো। ওই পুজোর অসুরের মূর্তিতে ছিল মাথাজোড়া টাক। চোখে রয়েছে গোলাকৃতি চশমা। অসুরের হাতে রয়েছে লাঠি। আর সেই অসুরের বুকে ত্রিশূল বিঁধিয়েছেন দেবী দুর্গা। এমন ঘটনা সামনে আসতেই শুরু হয় প্রবল চাপানউতোর।


উদ্যোক্তাদের দাবি:
হিন্দু মহাসভার রাজ্য সভাপতি সুন্দরগিরি মহারাজ বলেন, 'আমরা সবাই জানি রাজা উলঙ্গ, কিন্তু বলতে এতদিন কেউ সাহস পাচ্ছিল না। আমার মনে হয় এই যদি মূর্তির আদল হয়ে থাকে তা হলে তা সঠিক হয়েছে।' হিন্দু মহাসভা বরাবরই গান্ধীজির হত্যাকারী নাথুরাম গডসেকে দেশপ্রেমী হিসেবে তুলে ধরে। কখনও গাঁধীজির মৃত্যুদিবসে তাঁর অবয়বের দিকে গুলি চালিয়ে, কখনও নাথুরাম গডসের ফাঁসির দিনকে বলিদান দিবস হিসেবে পালন করে বারবার বিতর্ক তৈরি করেছে তারা। এবার দুর্গা পুজোয় অসুরের জায়গায় কার্যত গান্ধীজিকে বসানোর, তাদের সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছে সব রাজনৈতিক দল।


কংগ্রেসের তোপ:
অধীর চৌধুরী বলেন, 'যে পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক বিভাজন রোখার জন্য বেলেঘাটাতে মহাত্মা গাঁধী অনশনে বসেছিলেন। সেই কলকাতার বুকে কী করে গাঁধীকে এমন অপমান করা হচ্ছে।' গান্ধীজির অপমানের অভিযোগে হিন্দু মহাসভার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে কংগ্রেস। কংগ্রেস নেতা কৌস্তভ বাগচি বলেন, 'এফআইআর করা হয়েছে। মহাত্মা গাঁধীর অপমান আমরা সহ্য করব না।'


সমালোচনা তৃণমূল-বিজেপির:
তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, 'মহাত্মা গাঁধীর দৃষ্টিভঙ্গি বা নীতি নিয়ে বহু বিতর্ক হয়েছে। কিন্তু তিনি জাতির জনক। তাঁকে অপমান করা জাতির লজ্জা।' ঘটনার নিন্দা করেছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।


প্রবল বিতর্কের মুখে, অবশেষে বদলে যায় অসুরের চেহারা। সপ্তমীর রাতে অসুরের মাথায় চুল ও মুখে গোঁফ লাগিয়ে, তার চেহারা কিছুটা বদলানো হয়। চোখ থেকে খুলে নেওয়া হয় চশমাও। হিন্দু মহাসভার কার্যকরী সভাপতি চন্দ্রচূড় গোস্বামী বলেন, 'আমার কাছে উড়ো ফোন এসেছে। নির্দেশ হচ্ছে এখুনি অসুরের রূপ বদল করার জন্য়। নাহলে পুজো বন্ধ করে দেওয়া হবে।' 


১৯১৫ সালে অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন পণ্ডিত মদনমোহন মালব্য। পরে বিনায়ক দামোদর সাভারকর হিন্দু মহাসভার সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ও একসময় হিন্দু মহাসভার সভাপতি ছিলেন। পরে তিনি জনসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠা করেন।


আরও পড়ুন: সন্ধিপুজোয় আবেগপ্রবণ কল্যাণ, কেঁদে ভাসালেন তৃণমূল সাংসদ