কলকাতা : বাতাসে কার্যত পুজোর গন্ধ ! হাতে আর কয়েকটা দিন । তার পরেই প্রতীক্ষার অবসান। কিন্তু অনেকেই বলে থাকেন, পুজো আসব আসবটা-ই ভাল। কারণ, এসে গেল কীভাবে যে কয়েকটা দিন পেরিয়ে যায়, বোঝাই যায় না ! তার পর আবার সেই এক বছরের অপেক্ষা। আর পুজোর এই সমাপ্তিলগ্ন শুরু হয়ে যায় সন্ধিপুজোর (Sandhi Puja) সময় থেকেই। কারণ, এই সময়টা যে অষ্টমীর (Asthami) বিদায় ও নবমীর আগমনপর্ব। কিন্তু, কী এই সন্ধিপুজো ? তার মাহাত্ম্য-ই বা কী ?


সন্ধিপুজো-


অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট ও নবমী তিথির প্রথম ২৪ মিনিট। মোট ৪৮ মিনিট ধরে সন্ধিপুজো অনুষ্ঠিত হয়। দুর্গাপুজোর অন্যতম বিশেষ পর্ব এই সন্ধিপুজো। অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণ বা মাহেন্দ্রক্ষণে যেহেতু এই পুজো হয়, তাই এই পুজোর নাম সন্ধিপুজো।


আরও পড়ুন ; কলাবউ কি সত্যিই গণেশের স্ত্রী ? কী মাহাত্ম্য নবপত্রিকার ?


সন্ধিপুজোর মাহাত্ম্য-


অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে সন্ধিপুজোর আয়োজন করা হয়। এই সময়ে মা দুর্গা চামুণ্ডা রূপে পূজিত হন। কারণ, এই সেই বিশেষ ক্ষণ যখন দেবী চামুণ্ডা চণ্ড ও মুণ্ড নামে দুই অসুরকে নিধন করেছিলেন । চণ্ড ও মুণ্ড ছিলেন অসুরের দুই বন্ধু। মহিষাসুরের সঙ্গে যুদ্ধ চলার সময়, চণ্ড ও মুণ্ড ষুদ্ধের চুক্তি ভেঙে পেছন দিক থেকে দেবীকে আক্রমণ করেছিলেন। তাতেই দেবী রেগে গিয়ে চণ্ড ও মুণ্ডের মুণ্ড কেটে নেন। 


দুষ্টের দমন। অশুভ শক্তির বিনাশকাল। তাই সন্ধিপুজোর এই সময়টাকে অত্যন্ত শুভক্ষণ বলে মনে করা হয়। এর সঙ্গে বিভিন্ন নিয়ম জড়িয়ে রয়েছে। বিশেষ করে দেবীর পায়ে ১০৮টি লাল পদ্ম উৎসর্গ করা হয়। এর পাশাপাশি ১০৮টি প্রদীপও উৎসর্গ করতে হয়। কৃত্তিবাসের রামায়ণ অনুযায়ী, রাবণকে বধ করতে আশ্বিন মাসেই রামচন্দ্র অকালবোধন করেছিলেন। সেখানেও সন্ধিপুজোয় দেবীকে ১০৮টি পদ্ম নিবেদন করা হয়েছিল। তাতে উল্লেখ আছে, শিবভক্ত রাবণকে সুরক্ষা দিতেন পার্বতী। তাই ব্রহ্মা রামকে শিবের স্ত্রী পার্বতীকে পুজো করে তাকে তুষ্ট করতে পরামর্শ দেন। তাতে রাবণ-বধ সহজসাধ্য হবে। ব্রহ্মার পরামর্শে রাম শরৎকালে পার্বতীর দুর্গতিনাশিনী রূপের মহাপুজোর আয়োজন করেন।


১০৮টি নীল পদ্ম দিয়ে মহানবমী পুজোর পরিকল্পনা করেন রাম। হনুমান তাকে ১০৮টি পদ্ম এনে দেন। তার থেকে একটি পদ্ম লুকিয়ে রাখেন মহামায়া । একটি পদ্ম না পেয়ে রাম নিজের একটি চোখ উপড়ে দুর্গাকে নিবেদন করতে গেলে, দেবী পার্বতী আবির্ভূত হয়ে রামকে কাঙ্ক্ষিত বর দেন।