কলকাতা : দরজায় কার্যত কড়া নাড়ছে। আর কয়েকদিন পরেই বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো (Durga Puja)। যাকে স্বীকৃতি দিয়েছে UNESCO-ও। এত বড় একটা উৎসব (Festival) ঘিরে আমেজ তৈরি হয়ে যায় অনেক আগে থেকেই। এ কথা বলতে বাকি রাখে না। শুরু হয়ে যায় বাজার করা। বিশেষ করে পোশাক কেনার হুড়োহুড়ি। কারণ, পুজোর কয়েকটা দিন নানা রকমের পোশাকে নিজেদের সাজিয়ে তোলেন সব বাঙালিই। ষষ্ঠী হোক বা অষ্টমী, নবমী... এক একটা দিনের জন্য এক এক রকমের পোশাক। কাজেই এহেন এক পুজোর রীতি সম্পর্কেও প্রায় সব বাঙালিই ওয়াকিবহাল। তবুও, কিছু কিছু অজানাও থেকে যায়। সেসবেরই পুঙ্খনাপুঙ্খ আলোচনা করতে এই পর্ব। আজকের আলোচনাপর্বে...নবপত্রিকা।


প্রসঙ্গ-নবপত্রিকা


দুর্গাপুজোর সময় আমরা কলাবউয়ের কথা শুনি। যে কোনও মণ্ডপে গেলে দেখা যায়, লাল পাড় সাদা শাড়িতে একটি কলাগাছ রয়েছে। যাতে ঘোমটা দেওয়া। গণেশের পাশে থাকে বলে অনেকেই এটিকে গণেশের স্ত্রী বা কলা বউ বলে থাকেন। কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে এটি নবপত্রিকা। গণেশের মা দুর্গা। প্রচলিত ভাষায় নবপত্রিকার নাম কলা বউ। 


নবপত্রিকা অর্থাৎ নটি গাছের পাতা। যদিও বাস্তবে পাতা নয়, নটি উদ্ভিদ। এই নটি উদ্ভিদ আসলে দেবী দুর্গার নটি বিশেষ রূপের প্রতীক হিসেবে কল্পনা করা হয়। সেগুলি হল-


কলা গাছ- এর অধিষ্টাত্রী দেবী ব্রহ্মাণী 
কচু গাছ- অধিষ্টাত্রী দেবী কালিকা
হলুদ গাছ- অধিষ্টাত্রী দেবী উমা
জয়ন্তী গাছ- অধিষ্টাত্রী দেবী কার্তিকী
বেল গাছ- অধিষ্টাত্রী দেবী শিবা
বেদানা বা ডালিম গাছ- অধিষ্টাত্রী দেবী রক্তদন্তিকা
অশোক গাছ- অধিষ্টাত্রী দেবী শোকরহিতা
মান কচু গাছ- অধিষ্টাত্রী দেবী চামুণ্ডা
ধান গাছ- অধিষ্টাত্রী দেবী লক্ষ্মী


আচার কী ?


মহাসপ্তমী। দুর্গাপুজোর আনন্দ কার্যত সপ্তমে। চারিদিকে ঢাক-ঢোলের শব্দ। আর বিশেষ এই দিনের সকালে দেখা যায়, নবপত্রিকা (একটি সপত্র কলাগাছের সঙ্গে অপর আটটি সমূল সপত্র উদ্ভিদ একত্র করে শ্বেত অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে শাড়ি বধূর বেশ ধারণ করানো হয়) নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পুজোমণ্ডপের নিকটস্থ কোনও জলাশয় বা নদীতে। পুরোহিতই কাঁধে করে নিয়ে যান। সঙ্গে ঢাক-ঢোল, মহিলাদের শঙ্খ ও উলু ধ্বনি। শাস্ত্র মেনে স্নান করানোর পর নতুন শাড়ি পরানো হয় নবপত্রিকাকে। এরপর মণ্ডপে নিয়ে গিয়ে সেটিকে স্থাপন করা হয়। এর পরই দুর্গাপুজোর মূল অনুষ্ঠানের প্রথাগত সূচনা হয়।


গবেষকদের অনেকের মতে, নবপত্রিকার পুজো প্রকৃতপক্ষে শস্যদেবীর পুজো। কৃত্তিবাস ওঝার রামায়ণে রামচন্দ্রের দ্বারা নবপত্রিকা পুজোর উল্লেখ আছে। 


উল্লেখ্য, গণেশের স্ত্রীদের নাম-রিদ্ধি ও সিদ্ধি।