কলকাতা: দুর্গাপুজো (Durga Puja 2022) মানে এখনও চোখের সামনে ভেসে ওঠে গ্রামের সেই পুজোটাই। একটা জামা পরেই কাটত পুজোর চারটে দিন। বাড়িতে অতিথি আগমন আরও কিছুটা বাড়িয়ে তুলত পুজোর আনন্দ। মা কাকিমাদের হাতে তৈরি মিষ্টির গন্ধ ম ম করত চারিদিক। কেমন ছিল ছেলেবেলার পুজো? স্মৃতিচারণায় শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার ( Educationist Pabitra Sarkar)। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের (Rabindra Bharati University) প্রাক্তন উপাচার্য জানালেন, ছেলেবেলা কেটেছিল পূর্ববঙ্গের ঢাকা জেলার অখ্যাত গ্রামে। ধামরাই শহরের পাশেই সেই গ্রাম। ছোটবেলার পুজো মানেই ওপার বাংলার স্মৃতি। দশ বছর বয়সে এদেশে চলে আসা। কিন্তু ওপার বাংলার সেই পুজোই থেকে গিয়েছে মনের মণিকোঠায়। 


পুজোর স্মৃতিচারণায় শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার: গ্রামে সেসময় একটাই পুজো হত। তখন ইলেক্ট্রসিটি ছিল না। তখন ছিল হ্যাজাক বা ডে লাইট। সেটাই ছিল সবচেয়ে উজ্জ্বল আলো। আমাদের একান্নবর্তী পরিবার ছিল। পুজোর উৎসাহ, আনন্দের পাশাপাশি আরেকটা বিষয় নিয়ে বড় আগ্রহ ছিল আমাদের। দেখা যেত, পুজোর একমাস বা পনেরো দিন আগে নদীর ঘাটে নৌকো এসে ভিড়ছে। দুর্গাপুজো মানেই বাড়িতে প্রচুর লোকজনের সমাগম। পুজোর সময় শহর থেকে মেয়ে-জামাই, ছেলেরা বাড়ি ফিরত। আর তাই তাঁদের আসার জন্য অনেক আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে শুরু করতেন মা-কাকিমারা। নারেকেলে স্তূপ জমা হয়ে যেত। সেই নারকেল ছাড়িয়ে তা থেকে নানা রকমের মিষ্টি তৈরি হত। তক্তি, নাড়ু, এমনকী মুগ ডালেরও মিষ্টি হত বাড়িতেই। পুজোর সময় বাড়িতে যাঁরা আসত তাঁদের পেতাম পছন্দের উপহারও। খেলনা, বই, কৌটোর দুধ, মিষ্টি নিয়ে আসতেন তাঁরা। মনে আছে জামাইবাবু একবার একটা বই এনে  দিয়েছিলেন। জ্ঞান বিজ্ঞানের মধুমান্য বলে একটা বই, সেটা প্রায় রামায়ণ-মহাভারতের মতো হয়ে গিয়েছিল। রোজ পড়তাম সেটা। 


কেমন ছিল পুজোর দিনগুলি? পুজোর চারদিন বাড়িতে খাওয়া দাওয়া নেই। অষ্টমীর দিন নিরামষ, আরেক নবমীর দিন মাংস খাওয়া হত। পুজোর সময় কই মাছ খেতেই হবে আমায়। পুজো মানেই নতুন জামা কেনা। আমাদের নতুন জামা আসত শহর থেকে। নতুন জুতোও কেনা হত। আর সেই জুতো পরে পায়ে ফোসকা পড়ে যেত। তবে প্রত্যেকদিন যে একটা করে নতুন জামা পরা হত, তা নয়। আমাদের সময় একটাই জামা হত পুজোতে। সেটাই চারদিন পরতাম। আর পুজোর আচার অনুষ্ঠান, পুজো দেখার পাশাপাশি আরেকটা আকর্ষণ ছিল আমাদের ছেলেবেলায়। পুজোর সময় যাত্রা, গান বাজনা, কীর্তন হত। আর দুর্গাপুজো মিটে যাওয়ার পর আমাদের গ্রামে নাটক হত, কলকাতায় মঞ্চস্থ বিখ্যাত সব নাটক সে সময় গ্রামে দেখেছি। রিহার্সাল হত আমাদের বাড়িতেই। অন্ধকার ধান ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে হ্যারিকেন দুলিয়ে দুলিয়ে অন্য গ্রামের লোকেরা নাটক দেখতে আসতেন। নাটকের পরে খাসির মাংস আর লুচি খাওয়া হত। 


১০ বছর বয়সের পর এপার বাংলায় চলে আসা। রিফউজি হিসেবেই এসেছি এদেশে। থাকতে শুরু করি খড়গপুরে। রিফিউজিদের জন্য একটা স্কুল তৈরি হয়। সেখানেই ভর্তি হই। দুই বাংলার পুজোর স্বাদ আলাদা হলেও, আন্তরিকতায় কোনওদিন ভিন্নতা পাইনি। তখন থিমের রমরমা ছিল না। বড় জোড় ছিল একটা পাহাড়ের ছবি, সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন মা দুর্গা আর তাঁর পরিবার। খড়গপুর থানার পাশে একটা মাঠে ট্রাকের উপর সব প্রতিমা এনে হাজির করা হত। সেটা একটা দেখার মতো বিষয় ছিল। কাঁসাই নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দিতে যেতাম। বেশ খানিকটা রাস্তা নাচ গান করে যাওয়া হত।


আরও পড়ুন: Durga Puja 2022: শেষ মুহূর্তে উমা বরণের প্রস্তুতি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে স্বাগত জানাচ্ছে হায়দরাবাদ বাঙালি সমিতি