নিবেদিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, হাওড়া: মধ্য হাওড়ার প্রসিদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার। ৩৫০ বছরেরও বেশি পুরনো এই পুজো। নিয়মনিষ্ঠা ভরে হয় পুজো। আর এ-বাড়ির বৈশিষ্ট্য হল, একই পরিবারে হয় দুই প্রতিমার পুজো।
পরিবারের ইতিহাস
পরিবারের প্রবীণ সদস্য গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় এবিপি লাইভকে জানালেন, গিরীশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় এ বাড়ির পূর্বের প্রাণ-পুরুষ। উত্তর কলকাতার রাজবল্লভ চট্টোপাধ্যায়ের পরিবারের সঙ্গে এই পরিবারের বৈবাহিক সম্পর্ক তৈরি হয়। তারপরই মধ্য হাওড়ার জমিদারি পান তিনি। তাঁরই মধ্যমপুত্র কালী বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নামেই হাওড়ার বিশাল বড় বাজার ও রাস্তা। ১৯৩৬ সালে একই পরিবারের ননীগোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় আলাদা করে পুজো শুরু করেন। হাওড়ায় তাঁর পরিচিতি ছিল নাদুবাবু হিসেবে। তারপর থেকেই এই বাড়িতে দুটি পুজো হয়ে আসছে। প্রাচীন পুজো ও নতুন বাড়ির পুজো। নিয়মরীতি একই। একসঙ্গে দেবী বিসর্জনও হয়। তখন পুজোর সময় পুরো বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার মিলেমিশে একাকার হয়ে থাকে।
পুজোর নিয়মবিধি
মধ্য হাওড়ার সমৃদ্ধিতে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের অবদান মুখে মুখে ফেরে। নন্দোৎসব থেকে শুরু হয় পুজোর প্রস্তুতি। নতুন পুজোর পুজো শুরু হয় প্রতিপদ থেকে। এবারও তার অন্যথা হয়নি। প্রতিপদ থেকে দশমী পর্যন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের আমিষ খাওয়া হয় না। পুজো হয় বৈষ্ণব মতে। বলি হয় চালকুমড়ো। মায়ের ভোগও সম্পূর্ণ নিরামিষ। সাদা ভাত-খিচুড়ি-পোলাও তো বটেই, সেই সঙ্গে পাঁচ ভাজা, শুক্তো, নানাবিধ তরি তরকারি মাকে উৎসর্গ করা হয়। বিভিন্ন সবজি দিয়ে করা চাটনি দেওয়া হয় মাকে। বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির কলার বড়া দেওয়া পায়েস প্রসিদ্ধ। বাড়ির বৌয়েরা ভোগ রান্না করেন। তাঁদের দীক্ষিত হওয়া আবশ্যক। আগে নিয়ম ছিল মহিলারা এক বস্ত্রে রান্না করবেন ভোগ। শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজ বা সায়াও পরতেন না ভোগ রান্না করতেন যিনি।
ব্রতী প্রথা
এই পরিবারের ব্রতী প্রথা খুব কঠিন। বংশের কোনও একজন গৃহবধূর নামে সংকল্প করে শুরু হয় পুজো। তাঁকে কিন্তু কঠিন নিয়মের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। উপোশ, হবিষ্যান্ন খাওয়া সহ আরও অনেক উপাচার পালন করতে হয়। নবমীর দিন ৯ বছরের একটি মেয়েকে কুমারী হিসেবে পুজো করেন ব্রতী। এ বাড়িতে কলাবৌ স্নান হয় বাড়ির মধ্যেই। ১০৮ প্রদীপ জ্বালিয়ে হয় সন্ধিপুজো। কুমারী পুজোর পর ধুনো পোড়ানোর রীতি রয়েছে এই বাড়িতে। তারপর তাঁদের সন্তানস্থানীয় কেউ কোলে বসে।
দশমীতে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের দুই প্রতিমা একসঙ্গে বিজয়া যান। কাঁধে করে দেবীকে গঙ্গার উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। আগে এগোন প্রাচীন প্রতিমা, পিছে নতুন ঠাকুর। সেই দৃশ্য কার্যত নয়নাভিরাম।