ঋত্বিক প্রধান, পূর্ব মেদিনীপুর: করোনা আবহে (Coronavirus) গৃহবন্দি হয়েছিল গোটা বিশ্ব। টানা দুই বছর ভাটা পড়েছিল উৎসবের মেজাজেও। এখন সেই পরিস্থিতি কাটিয়ে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে জীবন। আর এবার সেই চিন্তাধারাকেই কাজে লাগিয়েই পুজোয় মাত করতে চলেছেন পূর্ব মেদিনীপুরের (Purba Medinipur) পঁচেটগড় রাজবাড়ির (Panchetgarh Heritage Raj Bari) বাসিন্দারা। 


করোনা জয় করে পুজোয় মাততে চলেছে পঁচেটগড় রাজবাড়ি


হাওয়ায় কাশফুলের দোলা। সঙ্গে ভাসছে শিউলির গন্ধ। পরিবেশই জানান দিয়েছে মা আসছেন। সেজে উঠছে গোটা রাজ্য। করোনার বাধা কাটিয়ে সাজো সাজো রব পঁচেটগড় রাজবাড়িতেও। 


এই রাজবাড়ির ইতিহাস সুদীর্ঘ। পঁচেটগড় রাজবাড়ির সুনাম রয়েছে রাস উৎসবের জন্য। রাস উৎসবের পাশাপাশি প্রত্যেকবছর এই বাড়িতে হয় দুর্গাপুজো, যার বয়স প্রায় ৪০০ বছর। রাস উৎসবের  মতোই জাঁকজমক করে হয় দুর্গাপুজো। তবে এখানে প্রতিমার আদল খানিক আলাদা। প্রতিমা এখানে পটে এঁকে তৈরি করা হয়।


তবে বিগত কয়েক বছর করোনার ধাক্কায় উৎসবের মেজাজে পড়েছিল ভাটা। রীতি মেনে দুর্গাপুজো হলেও, তা ছিল নামমাত্র। ছিল না কোনও জাঁকজমক। তবে পরিস্থিতি বদলেছে। ক্রমে করোনা আবহ কাটিয়ে ছন্দে ফিরছে জীবন। আর এই চিন্তা ভাবনাকেই কাজে লাগিয়ে পঁচেটগড় রাজবাড়ি জুড়ে চলছে এখন শ্যুটিংয়ের আবহাওয়া। 


রাজ পরিবারের সদস্য ফাল্গুনী দাস মহাপাত্রের কথায়, 'পঁচেটগড়ের রাস উৎসব পূর্ব মেদিনীপুরের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। তার থেকেও পুরনো আমাদের দুর্গোৎসব। এখানের বিশেষত্ব ঘটপুজো। সেইসঙ্গে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে প্রত্যেক দেবদেবীর প্রাণদান হয় পুকুর থেকে। তারপর তা আমাদের নাটমন্দিরে স্থাপিত করা হয়। পটের পুজো আমাদের ঐতিহ্য। তবে গত বছর থেকে আমরা সেই ঐতিহ্য বজায় রেখে খানিক আধুনিকীকরণ করেছি। একটা ক্যানভাসের ওপর চারশো-পাঁচশো বছরের পুরনো দুর্গা প্রতিমাকে তুলে এনেছি। এই বছরও সেই ধারাই অব্যাহত থাকবে।' 


তাঁর কথায়, বিগত দু'বছর ধরে করোনা আবহের জন্য তেমনভাবে এই উৎসব পালন করা যায়নি। তবে এবার তাঁরা আর কোনও খামতি রাখতে চাইছেন না। আর পুজোর আগেই রাজবাড়িসহ এখানকার দুর্গাপুজোকে তুলে ধরতে তৈরি করা হচ্ছে মিউজিক ভিডিও।‌ যার থিম হল করোনা আবহাওয়া কাটিয়ে ছন্দে ফিরছে জীবন।


এলাকার বাসিন্দা বিভূতিভূষণ পালের কথায়, 'আগে এখানে শস্য বলি হত। এখন সেই প্রথা উঠে গেছে। পুজোয় বড় উৎসব হয়। লোকে ভরে যায়।'


আরও পড়ুন: Weather Update: হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা দক্ষিণবঙ্গে, ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস উত্তরবঙ্গে


এলাকার বাসিন্দাদের কথায়  আগে জাঁকজমক করে হত এই দুর্গোৎসব, কিন্তু করোনা আবহের জন্য কিছুটা থমকে গিয়েছিল। কিন্তু এবারে যেহেতু মহামারীর দাপট অনেকটাই কমে এসেছে তাই তাঁরা ইতিমধ্যেই হাত লাগিয়েছেন পুজোর জন্য।


 



এলাকার বাসিন্দা অশ্বিনী  বারিক জানান, রাজ পরিবারের পুকুর থেকে ষষ্ঠীর দিন এই ঘট উত্তোলন হয়। তারপরে দুর্গা মন্দিরে নিয়ে এসে তাঁকে স্থাপন করা হয় এবং চারদিন ধরে ধুমধাম করে পুজো করা হয়। পুজোর আগেই রাজবাড়ির প্রাঙ্গনকে সাজানো হয়েছে বিভিন্ন আলোয়। আর তারই মাঝে চরম ব্যস্ততা এখন শ্যুটিংয়ের জন্য। সেখানে রাজবাড়ির প্রাঙ্গনকে তুলে ধরে তৈরি হচ্ছে মিউজিক ভিডিও। এটি প্রকাশ করা হবে রাজবাড়ির তরফে, মহালয়ার দিন।