কলকাতা: জীবন চিরস্থায়ী নয়। এই পৃথিবীতে সবই নশ্বর। কিন্তু যা ধ্বংস হয় না, যা চিরস্থায়ী, যা অনন্ত- তার খোঁজ তো বরাবর করে এসেছে মানুষ। সেই ভাবনাই এবার পুজোয় নিয়ে এসেছে উত্তর কলকাতার অন্যতম পুরনো পুজো উদ্যোক্তা আহিরীটোলা সর্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতি। এই বছর, দুর্গাপুজোয় (Durga Puja 2023) তাদের মন্ডপ সেজে উঠছে গুজরাতের সোমনাথ মন্দিরের আদলে। দেবাদিদেব মহাদেবের ১০৮ নাম এবং শিবের স্তোত্র দিয়ে সেজে উঠছে এবারের আহিরীটোলার পুজো মন্ডপ (Ahiritola Sarbojanin Durgotsab Samity)। থিমের নাম অবিনশ্বর।


কেন ভাবনায় সোমনাথ মন্দির? পুজো উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, সোমনাথ হলেন শিব, যাঁকে সবাই স্বয়ম্ভূ বলেই জানেন। সময় যাঁর নিয়ন্ত্রণে, সৃষ্টি-স্থিতি-লয় তাঁরই ইচ্ছের অধীন। একদিকে যেমন শিব ভাবনা। তেমনই গুরুত্ব পেয়েছে সোমনাথ মন্দিরের ইতিহাসও। ইতিহাস অনুযায়ী এই মন্দির বহু পুরনো। বারবার আক্রমণের মুখে ধ্বংস হয়েছে এই মন্দির, আবার নতুন করে গড়ে তোলা হয়েছে। বারবার ধ্বংস হয়েও বারবার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে এই মন্দির- অর্থাৎ এর নাশ নেই। এই বিষয়টিকে তুলে ধরা হচ্ছে মন্ডপভাবনায়। বাঙালির প্রাণের উৎসব দুর্গাপুজোয় শিবের উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ। দুর্গা প্রতিমার মাথার উপর শিবের প্রতিকৃতি রাখা হয়। সেটি মাথায় রেখেই  এ বছর মন্ডপের বিষয়ে ভাবনা ও সজ্জায় গুরুত্ব পাচ্ছে শিব-ভাবনা। থিম ভাবনায় রয়েছেন শিল্পী দেবজ্যোতি জানা, নবকুমার পালের প্রতিমায় হবে দেবী আরাধনা। আলোকসজ্জায় রয়েছেন দীনেশ পোদ্দার এবং দীপঙ্কর।


ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শমীক কুমার সাহা জানাচ্ছেন, ১৬ অক্টোবর কলকাতার আমেরিকান কনসুলেট জেনারেল (U.S. Consulate General Kolkata) আসবেন এই পুজোয়। বেশ কিছু অনুষ্ঠানও রয়েছে সেদিন। মহালয়ার দিন মুখ্যমন্ত্রীর হাতে উদ্বোধন করানোর আশা করছেন পুজো উদ্যোক্তারা। অষ্টমীর দিন বড় করে ভোগের আয়োজনও হয়ে থাকে এখানে। পুজোর সময় আয়োজন হয় নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনও হচ্ছে। এবার আহিরীটোলা সর্বজনীনের পুজোয় রয়েছে থিম মিউজিকও। 
 
১৯৪০ সালে 'আহিরীটোলা সর্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতি'-এর হাত ধরে দুর্গা আরাধনা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন প্রয়াত হরিশঙ্কর পাল। ছিলে অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা,সমাজসেবী প্রয়াত জহরলাল চন্দ্র। এবার এই পুজোর ৮৪তম বর্ষ। গত আট দশকেরও বেশি সময় ধরে একাধিক প্রথিতযশা ব্যক্তিত্ব এই সমিতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেই তালিকায় রয়েছেন প্রফুল্ল চন্দ্র সেন, অতুল্য ঘোষ, বিজয় সিং নাহার, তুষার কান্তি ঘোষ, হরি মোহন  পাল, বলাই চাঁদ দে মন্ডল, শ্যাম সাহা, হরিমোহন শীল, পশুপতি ভট্টাচার্য। প্রবীণের সঙ্গে নবীনের মেলবন্ধনের আদর্শ উদাহরণ দেখা যায় আহিরীটোলা সর্বজনীনে।বয়স নির্বিশেষ স্থানীয় বাসিন্দারা সকলেই নানাভাবে পুজোর প্রস্তুতিতে সাহায্য করেন। চাকরি-ব্যবসা সামলে ডুবে যান পুজোর কাজে, বলছেন বর্তমান উদ্যোক্তারা। 


আরও পড়ুন: ঘনঘন তোপধ্বনিতে আগমনবার্তা দেবী মৃন্ময়ীর, পুজোর সপ্তাহদুয়েক আগেই মল্লরাজ পরিবারে চলে এলেন 'বড় ঠাকুরন'