তুহিন অধিকারী, বাঁকুড়া: পুজোর (Durga Puja 2023) ঢাকে কাঠি পড়তে এখনও সপ্তাহদুয়েক বাকি, এরই মধ্যে উৎসবের মেজাজ বিষ্ণুপুরের (Bishnupur Mallabhum Family) মল্লরাজ পরিবারে। হাজার বছর প্রাচীন রীতি মেনে আজ থেকে দেবী মৃন্ময়ীর পুজো শুরু হয়ে গেল সেখানে। মুহুর্মুহু তোপধ্বনি জানিয়ে দিল, এসে গিয়েছেন দেবী মৃন্ময়ী। মণ্ডপে মণ্ডপে চূড়ান্ত ব্যস্ততা।


অতীত...
ইতিহাস বলছে, ৯৯৭ খ্রিস্টাব্দের আগে মল্ল রাজাদের রাজধানী ছিলো জয়পুরের প্রদ্যুম্নপুর এলাকায়। ৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের কোনও এক সময়ে মল্লরাজ জগৎমল্ল শিকার করতে বেরিয়ে জঙ্গলে পথ হারিয়ে ফেলেন। কথিত আছে, পথের খোঁজ করতে গিয়ে ক্লান্ত জগৎমল্ল একসময় বট গাছের তলায় বসে পড়েন। সেখানেই নানা অলৌকিক কাণ্ডকারখানার মুখোমুখি হতে হয় রাজাকে। শেষে রাজা ওই বট গাছের নিচে দেবী মৃন্ময়ীর মন্দির স্থাপন করার দৈববাণী পান। নির্দেশ মোতাবেক রাজা জগৎমল্ল বট গাছের নিচেই দেবীর সুবিশাল মন্দির তৈরী করেছিলেন। পাশাপাশি, ঘন জঙ্গল কেটে  রাজধানী সরিয়ে আনেন বিষ্ণুপুরে। তার পর দীর্ঘ ১০২৭ বছর ধরে বহু উত্থান-পতনের সাক্ষী রয়েছেন দেবী মৃন্ময়ী। শোনা যায়, একসময় এই পুজোয় নরবলী হত। পরবর্তীতে মল্ল রাজারা বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হলে নরবলি প্রথা বন্ধ করে শব্দকে ব্রহ্ম জ্ঞান করে তোপধ্বনীর প্রচলন শুরু হয়। সেই প্রথা আজও চলে আসছে।


নিয়ম-কানুন..
পুজোর প্রতিটি নির্ঘন্ট আজও ঘোষিত হয় তোপধ্বনীর মাধ্যমে। সারা রাজ্যে দুর্গাপুজা কালিকাপুরাণ মতে হলেও শুরুর দিন থেকে বিষ্ণুপুরের রাজপরিবার দেবী মৃন্ময়ীয় পুজো করে একটি প্রাচীন বিশেষ পুঁথি অনুসারে। 'বলিনারায়নি' নামের সেই পুঁথির নিয়ম নীতি মেনেই সেই পুজো হয় এখনও। রাজার পুজো। তাই পুজোর নিয়ম কানুন ভিন্ন ধরনের। এই পুজো শুরু হয় জিতাষ্টমীর ঠিক পরের দিন অর্থাৎ নবমী তিথি ধরে। এই বছরও তার অন্যথা হল না। আজ নবম্যাদি কল্পারম্ভে সাত সকালে দেবীর আগমন ঘটে প্রাচীন মন্দিরে। প্রাচীন রীতি অনুসারে আজ রাজ দরবার সংলগ্ন গোপালসায়রে স্নানপর্ব সেরে মন্দিরে আনা হল বড় ঠাকুরানি অর্থাৎ মহাকালীকে। দেবীপক্ষের চতুর্থী তিথিতে মন্দিরে আসবেন মেজ ঠাকুরানি অর্থাৎ মহালক্ষ্মী। সপ্তমীর দিন আনা হবে ছোট ঠাকুরানি অর্থাৎ মহা সরস্বতীকে। এই তিন ঠাকুরানি আসলে স্থানীয় ফৌজদার পরিবারের হাতে আঁকা তিনটি বিশেষ পট। আরাধানা হবে নিয়ম মেনে।
ময়ের সঙ্গে রাজার রাজপাট চলে গিয়েছে, ধুলোয় মিশে গেছে বিশাল রাজপ্রাসাদ। গড়ের আকারে থাকা প্রাচীন মল্ল রাজধানী বিষ্ণুপুর আজ আধুনিক শহর। কিন্তু আজও দেবীর আগমনে মল্লভূম জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে পুজোর গন্ধ। এক সময় যে তোপের শব্দ শুনে দূর দূরান্তের প্রজারা জানতে পারতেন দেবীর আগমন বার্তা, তার পরিসর ছোট হয়ে এলেও বন্ধ হয়নি। স্থানীয় মুর্ছা পাহাড় থেকে কামান দাগা হয় আজও। আনন্দে মেতে ওঠে প্রাচীন মল্লভূমের আপামর মানুষ।


আরও পড়ুন:আজ কৃষ্ণানবমী, চণ্ডীপাঠ, মঙ্গলারতিতে শীল লেনের দাস বাড়িতে দেবীর অকাল বোধন