কলকাতা: ঢাকের বাদ্যি, মন্ত্রোচ্চারণ, ধুনোর গন্ধ, পুষ্পাঞ্জলি। ষোলো আনা পুজোর আনন্দে বাংলা। অষ্টমীতে রাজপথে জনজোয়ার। প্যান্ডেল হপিং থেকে আড্ডা। সঙ্গে দেদার খাওয়া-দাওয়া। সব মিলিয়ে উৎসবের জমজমাট আমেজ। সাধারণ মানুষ থেকে তারকা, তাতে সামিল সকলেই।


বেলুড় মঠ...
অষ্টমীর দিন বেলুড় মঠের একটি আকর্ষণ যদি কুমারী পুজো হয়, তাহলে আরেকটি আকর্ষণ হল ভোগ। এদিন কুমারী পুজো শেষের পরেই বেলুড় মঠে ভোগ খাওয়ার জন্য দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়। বেলুড় মঠে কুমারী পুজো শুরু হয়েছিল ৯টায়। নির্দিষ্ট সময় পরে তা শেষও হয়। কুমারী পুজো শেষ হওয়ার পর ভোগের জন্য ভক্তদের দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়ে যায়।


হাজরা পার্ক দুর্গোৎসবে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়...
মহাষ্টমী (Durga Puja 2023) মানে আমজনতা থেকে তারকা, সকলেই মণ্ডপমুখী। ব্যতিক্রম নন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে দেখা গেল হাজরা পার্ক দুর্গোৎসবে (Actor Prosenjit Chatterjee At Hazra Park) । বললেন, 'হাজরা পার্কের পুজোয় স্রেফ পুজো হিসেবে আসি না। এটা একদম বাড়ির মতো। আমি এখানে অঞ্জলি দিই। এটা মোটামুটি ফিক্সড। এখান থেকে আমাদের ভোগও যায়...।' তবে এবার যে এই পুজোর থিম তাঁর সবিশেষ ভাল লেগেছে, সেটা একাধিক বার বললেন টলিউডের 'বুম্বাদা'। ৮১ বছরের পুজোয় হাজরা পার্ক দুর্গোৎসবের থিম 'তিন চাকার গপ্পো '। অল্প দূরেই হাজরা মোড়ের অটোস্ট্যান্ড। সেখান থেকে প্রত্যেক দিন একাধিক রুটে অটো চলাচল করে। এই অটোস্ট্যান্ডকেই এবার শৈল্পিক আকারে মণ্ডপে তুলে ধরা হয়েছে। অভিনেতার কথায়, 'হাজরা পার্কের থিমটা আমাকে ছুঁয়ে গিয়েছে। কারণ যে মানুষগুলি আমাদের প্রত্যেক দিন পরিষেবা দেন, তাঁদের নিয়ে সে ভাবে কোনও কাজ হয় না। অঞ্জনদার একটা ছবিতে একবার অটোরিকশাচালকের চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। ছবিটা সুপারহিট হয়। সেখানে প্রায় হাজার জন অটোরিকশাচালককে নিয়ে একটা গান রয়েছে। ওদের একবার গানটা চালাতে অনুরোধ করব। আমরা এই অটোরিকশাচালকদের নানা নামে ডাকি ঠিকই, কিন্তু তাঁরা না থাকলে আমাদের কী অবস্থা হয় ভেবে দেখুন তো? অথচ পুজোর সময় এঁদের ছুটি নেই। আমাদের জন্য এঁরা রাস্তায় থাকেন। তাঁদের কথা ভেবে এবারের থিম। আমার খুব ভালো লেগেছে।' 


দেখা মিলল ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তরও...
লাল পাড়, সাদা শাড়ি। সঙ্গে বড় লাল টিপ। মানানসই গয়না, মেক-আপও করেছেন যত্ন করে। মহাষ্টমীতে বাঙালির ঐতিহ্যের সঙ্গে তাঁর সাজ-পোশাক যাতে খাপ খায় যায়, সেটা পুরোপুরি খেয়াল রেখেছেন ডাকসাইটে অভিনেত্রী। কিন্তু কীসের টানে বিজয়গড় পল্লিশ্রীর পুজোয় একাধিক দিন হাজিরা দেন তিনি? ঋতুপর্ণার কথায়, 'বাড়ির পুজোর মধ্যে একটা একাত্মবোধের অনুভূতি থাকে। সকলে মিলে আন্তরিক ভাবে আনন্দ করা যায়...বাড়ির পুজোর মধ্যে একটা ওনারশিপও থাকে।' বিজয়গড় পল্লিশ্রীর পুজোয় ঠিক এমনই অনুভূতি পেয়ে থাকেন টলি-তারকা। সঙ্গে আরও জানালেন, পুজোর ক'টা দিনই বেশ কিছু মানুষের সঙ্গে দেখা হয় তাঁর। ঋতুপর্ণার কথায়, 'এটি শুধু উৎসব নয়, আমাদের সম্পর্কগুলোরও মিলন মেলা।' কিন্তু এত কর্মব্যস্ততার মধ্যে পুজোর দিনগুলির জন্য আলাদা সময় বের করেন কী ভাবে? তাঁর মতে, এই সময়টা চলে গেলে, আর আসবে না। তাই দুর্গাপুজোর সময়টা একটু আলাদা রাখতে চান তিনি।


সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের গেট বন্ধ ঘিরে বিতর্ক...
ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার মোড় থেকে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজোয় ঢোকার যে গেট, সেটা বিকেল সাড়ে চারটে থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পুলিশের দাবি, 'ওভারক্রাউডিং' বা মাত্রাতিরিক্ত দর্শনার্থীর ভিড় হওয়ায় গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। যাঁরা ওই গেট দিয়ে ঢুকবে বলে এসেছেন, তাঁদের সামনের দিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় যাতে প্রত্যেকে একটি নির্দিষ্ট পথ দিয়েই ঢুকতে পারেন। যদিও লালবাজার একটু পরেই জানায়, গেট বন্ধ করা হয়নি। শুধু দর্শনার্থীদের ঘুরে যেতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ মণ্ডপে অন্য দিক দিয়ে যেতে বলা হচ্ছে তাঁদের। যদিও বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষের অভিযোগ, 'বেখাপ্পা সময়, সন্ধিপুজোর সময়ে গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমি প্রশ্ন করতে চাই, যদি বিকেল সাড়ে চারটের ভিড় কেউ নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তা হলে ভোর চারটের সময় তারা স্ট্যান্ড ডাউন করে কী ভাবে চলে যায়?' রাতের দিকে অবশ্য কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েলও বলেন, 'ওখানে পর্যাপ্ত পুলিশি ব্যবস্থা ছিল।' বিতর্ক সত্ত্বেও ভিড় কিন্তু কমেনি।