সঞ্চয়ন মিত্র, কলকাতা : উত্তর কলকাতার ঠনঠনিয়া কালীবাড়ির কাছে রামচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সুবিশাল চট্টোপাধ্যায় বাড়ি। ১৬০ বছর পেরিয়ে গিয়েছে এই পরিবারের পুজোর। বাপের বাড়িতে ৪ দিন কাটিয়ে উমার শ্বশুরবাড়িতে ফেরার পালা। বিষাদের মধ্যেও চোরবাগানের চট্টোপাধ্য়ায় বাড়িতে মাকে বরণের পর সিঁদুর খেলায় মাতেন মহিলারা।
এই পরিবারের ব্যতিক্রমী রীতি হল, দশমীর (Bijoya Dashami) দিন দেবীর দুর্গাকে (Durga Puja 2023) বাসি-ভোগ দেওয়া। বলা যেতে পারে দেবীর অরন্ধন। ইলিশের অম্বল এই ভোগের সঙ্গে অবশ্যই থাকতে হবে। নবমীর রাতে রান্না করা ভোগ পরদিন সকালে দেবীকে উত্সর্গ করা হয়। এই বাড়ির ভোগের মধ্যে চিংড়ির মালাইকারি সহ নানারকম মাছ সাজিয়ে দেওয়ার রীতি আছে।
দশমীতে স্বামীগৃহে মেয়েকে পাঠানোর আগে পরিবারের সদস্যরা মিলে একসঙ্গে গান ধরেন , ভজিতে তোমারে শিখি নাই কভু, ডাকি শুধু তোমায় মা বলে। সাধনার রীতি জানি নাকো নীতি, পুজি শুধু তোমায় আঁখি জলে।' এই গান গেয়ে মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন পরিবারের সদস্যরা। দেবী যেন কোনও ভুলত্রুটি হলে মার্জনা করেন ! এ বাড়ির রীতি অনুযায়ী দেবীকে কাঁধে করে বিসর্জন দেওয়া হত। এখন অবশ্য কাঁধে বিসর্জন হয় না। এরপর পারিবারিক প্রথা মেনে গঙ্গার ঘাটে প্রতিমা বিসর্জনে যান চট্টোপাধ্যায় পরিবারের পুরুষ সদস্যরা।
চোরবাগানের চট্টোপাধ্যায় পরিবারের নাম কলকাতার ইতিহাসে জ্বলজ্বল করছে। এই পরিবার এক সময় ছিল শিক্ষা-সংষ্কৃতি-সঙ্গীতচর্চার পীঠস্থান। আজও সেই ট্র্যাডিশন চলছে। একই নিয়ম মেনে স্বাধীনতা পূর্বকাল থেকে আজও এই দালানে চলছে দশপ্রহরণধারিনীর পুজো। কথিত আছে, রামচন্দ্র স্ত্রী দুর্গাদাসীর পরামর্শে বাড়ির ঠাকুরদালানে ১৮৬০ সালে প্রথম দুর্গাপুজোর আয়োজন করেন।
দশমীর সকালে কলকাতায় গঙ্গার ঘাটে ঘাটে চলছে বিসর্জনের প্রস্তুতি । কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জলে-স্থলে রয়েছে পুলিশের নজরদারি। প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে। ড্রোন উড়িয়েও নজরদারি চালানো হবে। গঙ্গাবক্ষে টহল দিচ্ছে রিভার ট্রাফিক পুলিশ। দশমীর দিন দুপুর সোয়া ১টা থেকে বন্ধ থাকবে চক্ররেল পরিষেবা। এদিন প্রথমে বাড়ির ঠাকুর বিসর্জন হবে। এরপর একে একে বারোয়ারি পুজোর প্রতিমা বিসর্জনের পালা। বাবুঘাট, জাজেস ঘাট, বাগবাজার ঘাট, আহিরীটোলা ঘাট-সহ গঙ্গার একাধিক ঘাটে চলবে বিসর্জন।
আরও পড়ুন :