সোমনাথ মিত্র, হুগলি: পুজো (Durga Puja 2023) আসতে আর মাসখানেকও বাকি নেই। দম ফেলার ফুরসত নেই শিল্পীদের। মা দুর্গা আর তাঁর ছেলেমেয়েদের সাজাতে তুঙ্গে ব্যস্ততা। সঙ্কট থাকলেও ঐতিহ্যে ছেদ পড়েনি। শারদোৎসবের আগে এক অন্য উৎসবের ছবি সিঙ্গুরে।
সঙ্কট থাকলেও ঐতিহ্যে ছেদ পড়েনি: পুজো আসতে ব্যস্ততা চরমে মালাকার পাড়ায়। ছুরি দিয়ে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম করে শোলা কেটে প্রতিমার অঙ্গসজ্জা প্রস্তুতি চলছে। সকাল থেকে রাত অবধি ব্যস্ত পরিবারের সদস্যরা। সিঙ্গুরের (Singur) বারুইপাড়া পলতাগড় পঞ্চায়েত এলাকায় একসময় বাড়ি বাড়ি তৈরি হত দেবী দুর্গার শোলার সাজ। কিন্তু এখন হাতে গোনা ক’টি পরিবার এই শিল্পকলার সঙ্গে যুক্ত। কাজের উপযুক্ত শোলার অভাব, ফোড়ে দৌরাত্ম্য, কলকাতায় শোলার চড়া দাম, উপযুক্ত পারিশ্রমিকে অভাবে আগ্রহ হারাচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। শোলার কাজের চাহিদা থাকলেও একাধিক প্রতিবন্ধকতার সামনে চরমে সঙ্কটে শোলা শিল্পীরা।
প্রতিমার অঙ্গসজ্জা ছাড়াও সারা বছর বিভিন্ন পুজোয় কাজ করে সংসার চলত শিল্পীদের। তাই সিঙ্গুরের বারুইপাড়া পলতাগড় গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার এই জায়গাটি মালাকার পাড়া নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টেছে অনেক কিছু। অল্প পারিশ্রমিকে দীর্ঘক্ষণ পরিশ্রমের জন্য এই শিল্পকর্মে পাওয়া যাচ্ছে না দক্ষ শ্রমিক। তাই পুজোর মুখে প্রতিমার সাজ তৈরিতে হাত লাগিয়েছেন বাড়ির মহিলারাও। তবে প্রবীণ শিল্পীদের মধ্যে রয়েছে আক্ষেপের সুর।
শিল্পীরা আরও জানাচ্ছেন, শোলা গ্রামের বনাঞ্চলে ও জলাশয়ে প্রচুর পাওয়া যেত। কিন্তু এখন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বনাঞ্চল। হারিয়ে যাচ্ছে জলাশয়। সেই সব জায়গায় গড়ে উঠছে কংক্রিটেক ইমারত। ফলে গ্ৰামাঞ্চলে শোলা গাছের ব্যাপক অভাব। পাশাপাশি কলকাতায় শোলার পাইকারি বাজারে ফড়ে দৌরাত্ম্যের ফলে সোলার দাম বেড়েছে অনেকটাই। চড়া দামে কিনতে হচ্ছে শোলা। শিল্পীদের অর্থাভাবের বিষয়টিও রয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে শোলার সাজের খরচ অনেকটা বাড়লেও সেই তুলনায় মিলছে না পারিশ্রমিক।
শোলা শিল্পী পরিবারের সদস্য নীলিমা মালাকার পুজোর মুখে হাত লাগিয়েছেন কাজে। তিনি জানান, “বিয়ের পর পর দেখেছি ১৫টা দুর্গা ঠাকুর, ২০টা কালী ঠাকুরের কাজ হত। তখন প্রচুর কাজের চাপ ছিল এখন আর সেই চাপ নেই। এবারে ৫টা দুর্গা ,৭টা কালী ঠাকুরের সাজ আছে। এসবের মধ্যে অর্ডার এলেও শোলার দাম প্রচুর। ফলে শুধুমাত্র শিল্পটাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যেটুকু কাজ করার তা করা হচ্ছে।’’
করোনাকালে সঙ্কটের মুখে পড়েছিলেন শিল্পীরা। এবছর কেটেছে সেই মন্দা। শিল্পী রথীন মালাকার জানান, এই শিল্পে আজ অবধি আমরা কোনও অর্থ সাহায্য পাইনি। পুজোর সময় চড়া সুদে মহাজনের কাছ থেকে টাকা ধার করে ব্যবসা করতে হয়। চাষীদের,তন্তুবায়দের জন্য সরকার কিছু অর্থ সাহায্য করে আমাদের তেমন হলে ভালো হয়। কেন্দ্রের নতুন "প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা" প্রকল্পে যদি আমাদের শিল্পের নাম থাকে তাহলে আমরা ও আবেদন করব। মহাজনের বদলে কম সুদে যদি সরকার ঋণ তাহলে অর্থ সাহায্য নিতে পারি। সাহায্য পেলে আমাদের শিল্পটা বেঁচে থাকবে। শিল্পী গনেশ মালাকার জানান, “কেন্দ্র বা রাজ্য যদি কিছু সাহায্য করে আমাদের শোলা শিল্পে তাহলে আমাদের এই জাতিগত কাজটা বেঁচে থাকবে। আগামী প্রজন্মরা তবেই এগিয়ে আসবে। বেঁচে থাকবে প্রাচীন এই শিল্প কলা।’’
আরও পড়ুন: Durga Puja 2023: ৩০০ বছর ধরে নিমকাঠের প্রতিমার আরাধনা, বিষ্ণুপুরে উগ্রচণ্ডা রূপে পূজিত হন দশভূজা