সুদীপ চক্রবর্তী, উত্তর দিনাজপুর : শেরশাহের আমল থেকে  এ পরিবারে  বন্দিত মা দুর্গা। পারিবারিক ইতিহাস অনন্ত দাবি করে তেমনটাই । যুগের পর যুগ পেরিয়েছে। পরিবর্তন হয়েছে কত নিয়মের। কিন্তু এত বছরের পুরনো ভূপালপুর  রাজবাড়ির পুজো ঘিরে স্থানীয় মানুষের উন্মাদনে ফিকে হয়নি এখনও। (Durga Puja)


প্রতিবারের মতো এবারেও একচালার ডাকের সাজের  প্রতিমা দিয়ে জমিদারি প্রথা অনুসারে দুর্গা পুজো করতে চলেছেন রাজা ভূপাল চন্দ্র রায় চৌধুরীর বংশধরেরা। উত্তর দিনাজপুর জেলার ইটাহার ব্লকের দুর্গাপুরে ভূপালপুর জমিদার বাড়ি এলাকার মানুষদের কাছে রাজবাড়ির পুজো।  


কথিত আছে, শেরশাহের আমল থেকেই এই বংশের দুর্গাপুজার প্রচলন হয়েছিল। পরবর্তীতে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় চৌধুরী,  ভূপাল চন্দ্র রায় চৌধুরী রাজ পরিবারের  বংশধরের হাত ধরে এখানে দেবী পূজিতা হন।  ইতিহাসের পথ বেয়ে আজও দুর্গাপুর রাজবাড়িতে পুজো করে আসছেন তাঁদের বংশধরেরা। (Durga Puja Celebration)


সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা পুজোর পদ্ধতির পরিবর্তন ঘটেছে রাজবাড়ির পুজোয়। আগে মহালয়ার দিন থেকেই দুর্গার আরাধনায় মেতে উঠতেন রাজ পরিবারের সদস্যরা এবং এই অঞ্চলের বাসিন্দারা। জোড়া মহিষ ও পাঁঠা বলির মাধ্যমে আগে দেবীর বোধন হত মহালয়াতেই। এখন মহাষষ্ঠীতেই দেবীর বোধন হয়। পাশাপাশি বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলি প্রথা। (Festival) 


পরিবারের সদস্যরা জানালেন, এ বাড়ির পুজোর নিয়ম নিষ্ঠা রয়ে গিয়েছে আগের মতোই। এখানে অসুরের গায়ের রঙ হয় ঘন সবুজ আর দেবী দুর্গার মাথার উপরে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরের অধিষ্ঠান । রাজ পরিবারের বর্তমান বংশধর অভিষেক রায় চৌধুরী বলেন, ' আমাদের আদি বাড়ি ছিল ইটাহারের চূড়ামন এলাকায়। সেখানেই দেবী দুর্গার আরাধনা হত। মহানন্দা নদীর করাল গ্রাসে রাজবাড়ি ও রাজ্যপাট চলে যায় নদীগর্ভে।  তারপর সেখান থেকে চলে এসে দুর্গাপুরে নির্মিত হয় রাজপ্রাসাদ ও দেবী দুর্গার মন্দির।'


মহালয়ার দিন থেকে রাজবাড়ির পুজোকে কেন্দ্র করে যাত্রাপালা, থিয়েটার, সার্কাসের আসর বসত। পুজোর কয়েকটা দিন এলাকার সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষের ভোজনের ব্যাবস্থাও থাকত। আমোদ প্রমোদে মেতে উঠতেন সকলেই। কালের পরিবর্তনে সেসব এখন ইতিহাস। তবে রাজবাড়ির দুর্গাপুজো নিয়ে এখনও এলাকার মানুষের মধ্যে একটা আলাদা উন্মাদনা থাকে।


নবমীর পুজোয় ভূপালপুর রাজবাড়ির বিশেষত্ব হল, এদিন পুজোর ভোগ ও ফল ফলাদি পুজোর পর ঠাকুর দালানের উঁচু জায়গায় বেঁধে রাখা হয়। এরপর গ্রামের বাসিন্দা ও পরিবারের লোকেরা যে যেভাবে যতটা ফল পেড়ে নিতে পারে, সে সেটা পেয়ে যায়।  ভূপালপুর রাজবাড়ির দুর্গাপুজো নিয়ে এলাকার মানুষের প্রতিবছরই ব্যাপক উন্মাদনা থাকে। এবারও তার অন্যথা হবে না।