ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, আশাবুল হোসেন ও দীপক ঘোষ, কলকাতা: শব্দ থেকে বায়ু- দূষণ কমানো নিয়ে সব স্তরেই কথা হয়েছে। শব্দবাজির দূষণ নিয়ে সবসময়েই বিভিন্ন স্তরে আলোচনা হয়। কিন্তু, রাজ্যে এর মধ্যেই বাড়িয়ে দেওয়া হল বাজির শব্দমাত্রা। যা ছিল ৯০ ডেসিবেল, তা থেকে বাড়িয়ে করে দেওয়া হল ১২৫ ডেসিবেল। এই শব্দমাত্রা বাড়িয়েছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। 


বলা হয়েছে, সবুজ শব্দবাজির ক্ষেত্রে শব্দের মাত্রা ১২৫ ডেসিবেলের মধ্যে এবং সবুজ আতসবাজির ক্ষেত্রে শব্দের মাত্রা ৯০ ডেসিবেলের মধ্যে রাখতে হবে। এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন পরিবেশকর্মীদের একটা বড় একাংশ। চিকিৎসকের মুখেও উঠে এসেছে উদ্বেগের কথা। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দাবি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 


ভোটের সময় থেকে নানা সময় বিভিন্ন জেলায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার কথা সামনে এসেছে। পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা থেকে শুরু করে উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুর- একাধিক বার সামনে এসেছে বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনা। এই নিয়ে বারবার বিতর্কের মাঝেই পুজোর মুখে রাজ্যে বাজির শব্দমাত্রা ৯০ ডেসিবেলের থেকে বাড়িয়ে ১২৫ ডেসিবেল করে দিল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। ১৭ অক্টোবর, পর্ষদের তরফে জারি করা নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, সবুজ শব্দবাজির ক্ষেত্রে শব্দের মাত্রা ১২৫ ডেসিবেলের মধ্যে এবং সবুজ আতসবাজির ক্ষেত্রে শব্দের মাত্রা ৯০ ডেসিবেলের মধ্যে রাখতে হবে। বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে শুধুমাত্র সবুজবাজি বিক্রি ও ফাটানো যাবে। এই পরিস্থিতিতে একটি প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে প্রত্যেক বছর কালীপুজোর রাতে শব্দবাজির দৌরাত্ম্য রুখতে হিমশিম অবস্থা হয় পুলিশের, সেখানে শব্দের মাত্রা ৯০ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ ডেসিবেল করার কী প্রয়োজন পড়ল? কাদের স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নিল পরিবেশ দফতর ও রাজ্য দূষণ পর্ষদ?


এই নিয়ে পরিবেশকর্মী নব দত্ত বলেছেন, 'এই আন্দোলন করতে গিয়ে ১৪ জন খুন হয়েছে। তারপরও রোখা যায়নি। গ্রিনবাজিতে শুধু ছাড়ের কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু গ্রিন বাজির কোনও কারখানাই নেই রাজ্যে।' এও প্রশ্ন উঠছে, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এই সিদ্ধান্তে কি বেআইনি বাজির কারবারিরা আরও উৎসাহিত হবে না? চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, এভাবে বাজির শব্দমাত্রা বাড়িয়ে দেওয়ার ফলে আমাদের কানে ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। NRS মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক প্রণবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'WHO কিছু গাইডলাইন দিয়েছে। আমাদের কান ৮৫ থেকে ৯০ ডেসিবেল পর্যন্ত সাউন্ড সহ্য করতে পারে। সেই ডেসিবেলটা কোনওমতেই ক্রস করা বাঞ্ছনীয় নয়। যদি ১১০, ১২০ ডেসিবেলের আওয়াজ আপার লিমিট করা হয়, তাহলে যে ফায়ার ক্র্যাকার্সগুলো ফাটানো হচ্ছে, সেই নয়েসগুলো আমাদের কানে যে কিউমুলোটিভ ড্যামেজ করবে, সেটা কিন্তু ইররিভার্সালও হয়ে যেতে পারে।' 


বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক কটাক্ষও। শব্দমাত্রা বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের প্রসঙ্গ এনেছেন সিপিএম নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, 'পরপর এত বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ। আওয়াজ শুনতে শুনতে অভ্যেস হয়ে গেছে, তাই বাড়িয়ে দিল।' রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দাবি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে রাজ্যের পরিবেশ দফতরের নির্দেশে কথা বলা হয়েছে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলের সঙ্গে। 


আরও পড়ুন: 'নির্মাণকল্পে সেরা..', পুজোয় আলোর রোশনাইয়ে ভাসল কলেজ স্কোয়ার