বাপন সাঁতরা, আরামবাগ: আরামবাগের মাধবপুরের রায় পরিবারের পুজো চলে ১৮ দিন। দেবী দুর্গার (Durga Puja 2024) সঙ্গে পরিবারের কুলদেবী বিশালাক্ষীরও পুজো করা হয়। সারা বছর পরিবারের সদস্যরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও পুজোর কদিন পুরনো বাড়িতে একত্রিত হন। 


রায় পরিবারের পুজো: বিশাল বাড়ি জুড়ে এখন শুধুই জীর্ণতার ছাপ। আগাছা ঢেকেছে বাড়ির বেশিরভাগ অংশ। অনেক জায়গায় জানালা, দরজা টুকুও অবশিষ্ট নেই। যখন তখন ইট খসে পড়েছে। অতীতে আরামাবাগের মাধবপুরের রায় পরিবারের এই বাড়ির জৌলুসে চোখ ধাঁধিয়ে যেত গ্রামবাসীর। পুজোর কদিনের জাঁকজমক ছিল মনে রাখার মতো। শোনা যায়, ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের সময় প্রজাদের মঙ্গলকামনায় এই বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন জমিদার শান্তিরাম রায়। বিশালাক্ষী মায়ের সাধক রাজা রণজিৎ রায়ের বংশধর ছিলেন তিনি। পরিবারের সদস্য স্বপন রায় বলেন, "মন্বন্তরের সময় মানুষের সেবা করতেই পুজো। আর্থিক কারণে অতীত ঐতিহ্য নেই। তবে প্রথায় কোনও খামতি নেই। অতীতে কামান দাগা হতো। সেই শব্দ যেত বিক্রপরে তারপরে সেখানে বিশালাক্ষী পুজো হামিরবাটির পুজো শুরু হতো। এখানে বোধনের দিন থেকে ১৭ থেকে ১৮ দিন পুজো। বোধন থেকে ষষ্ঠী পর্যন্ত বোধনের পুজো। ষষ্ঠীতে বেলবরণ। তারপরের দিন ঘট উঠবে। তারপরে সপ্তমী থেকে দশমীর পুজো হয়। মলমাস পড়লে দেড়মাসও পুজো হয়। এখানে দুটো তলোয়ারের পুজো হয় পুজোর সময়। বোধনের সময় থেকে পুজো হয়। মায়ের বেদীর পাশে তলোয়ার থাকে। ক্ষত্রিয় বংশের প্রথা অনুযায়ী পুজো হয়।''

সময়ের সঙ্গে পুজোর জৌলুস কমেছে। ভোগ থেকে আয়োজন সবই আজ অনেকটাই ফিকে। তবুও আজও পরিবারের সদস্যদের এক সুতোয় বেঁধে রেখেছে এই পুজো। রায় পরিবারের কুলদেবী বিশালাক্ষী। তাই একসঙ্গে দেবী দুর্গা ও দেবী বিশালাক্ষীর পুজো হয় এখানে। সপ্তমী থেকে নবমী ৭২ ঘণ্টা হোমের আগুন জ্বলে। দশমীতে বাড়ির সকল সদস্য মিলে বিশেষ মহামন্ত্র পাঠ করেন। দশমীর পরেও এক সপ্তাহ চলে মায়ের আরাধনা। এখন পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যই গ্রামের বাইরে থাকেন। তবে পুজোর সময় এখানে ফিরে আসেন সকলে। মন্দিরের আটচালায় চলে জমিয়ে আড্ডা। পরিবারের সদস্য সহেলি রায় বলেন, "কৃষ্ণা নবমী থেকে ঘটে পুজো শুরু হয়। দশমীর বৈঠক বসে। পরিবারের বড় ইতিহাস শোনান। নতুন প্রজন্ম সেই গল্প শুনতে মুখিয়ে থাকে।''


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।  


আরও পড়ুন: Durga Puja 2024: আড়ম্বরহীন আরাধনার সিদ্ধান্ত, আরজি কর কাণ্ডের আঁচ পারিবারিক পুজোতেও