শুভেন্দু ভট্টাচার্য, কোচবিহার: কোচবিহারের (Cooch Behar) রাজ পরিবারের বড় দেবীর (Durga Puja 2025) পুজো ৫০০ বছরের বেশি পুরনো। কথিত আছে কোচবিহারের রাজা নরনারায়ণ স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই পুজো শুরু করেন। তিনি স্বপ্নে যে দেবীমূর্তি দেখেছিলেন, সেই রূপেই এখনও পর্যন্ত পূজিত হন বড় দেবী।
কোচবিহারের রাজ পরিবারের বড় দেবীর মূর্তি অনন্য। কী এর বিশেষত্ব? রক্তবর্ণা দেবী, এই দেবীর সঙ্গে থাকেন না তাঁর চার সন্তান – লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশ। তাঁদের বদলে থাকেন দেবীর দুই সখী - জয়া এবং বিজয়া। দেবীর বাহনেও আছে অভিনবত্ব। দেবীর বাহন এখানে একাধারে বাঘ এবং সিংহ।
কোচবিহারের বড় দেবীর পুজোতে আছে বেশ কিছু নিয়ম। যেমন অষ্টমীতে মহিষ বলি। একসময় এই পূজোতে নরবলি হতো বলে শোনা যায়। চমকে ওঠার মতো তথ্য হল, এখনও নর রক্তের প্রয়োজন হয় দেবী পূজায়। এছাড়াও দশমীর বিসর্জনের সময় দেওয়া হয় শূকর বলি। একসময় কোচবিহারের রাজারা যে পুজোর সূচনা করেছিলেন এখন সেই পুজোর দায়িত্বে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন দফতরের অধীনস্থ দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ড।
এই পুজো প্রতি বছর শ্রাবণ মাসে শুরু হয়। শুক্ল অষ্টমীতে ময়না কাঠের পুজোর মাধ্যমে বড় দেবীর আরাধনার সূচনা হয়। তারপর ওই ময়না কাঠের দণ্ডের ওপরে তৈরি হয় দেবী দুর্গা। বংশপরম্পরায় এই দেবী মূর্তি তৈরি করে আসছে কোচবিহারের চিত্রকর পরিবার। কোচবিহারের মানুষের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে বড় দেবীকে কেন্দ্র করে।
প্রত্যেক বছর দেবী বাড়ি চত্বরে বসে মেলা । লক্ষ লক্ষ মানুষ উপস্থিত হন পুজোর দিনগুলিতে । অষ্টমীতে কোচবিহারের জেলাশাসক তথা দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রথমে পুষ্পাঞ্জলি দেন এরপর সাধারণ মানুষ পুষ্পাঞ্জলি দিতে পারেন । এক সময় কোচবিহারের রাজবাড়িতে এই পুজো হলেও বর্তমানে কোচবিহারের দেবী বাড়িতে বড় দেবীর মন্দিরে এখন এই পুজো অনুষ্ঠিত হয় । কয়েকশো বছর ধরে একই নিয়ম মেনে এখানে পূজিত হন বড় দেবী । তাল পাতার পুঁথি দেখে মন্ত্র উচ্চারণ করেন পুরোহিত । প্রতি বছর এই পুজোকে কেন্দ্র করে শুধুমাত্র কোচবিহার থেকেই নয়, নিম্ন অসমের বহু মানুষ ছুটে আসেন বড় দেবীর আরাধনায় অংশ নিতে। রাজ্যের অন্যতম এই প্রাচীন পূজোর আকর্ষণে এখনও এতটুকু ভাটা পড়েনি ।