অনির্বাণ বিশ্বাস, কলকাতা: শতবর্ষের দোরগোড়ায় ভবানীপুরের (Bhowanipur) মল্লিক বাড়ির (Mallick Bari) দুর্গাপুজো (Durga Puja)। এবার ৯৯ বছরে পা। আনন্দ, ব্যস্ততার মাঝেও মন খারাপ ভবানীপুরের মল্লিকবাড়ির সদস্যদের। নবমী নিশি পোহালেই উমা বিদায়ের ব্যস্ততা। এদিন সকালে চণ্ডীপাঠ হয়। এরপর অঞ্জলি দেন মল্লিক বাড়ির সদস্যরা।                                                               


১৯২৫ সালে উমার আরাধনা শুরু করেছিলেন রাধামাধব মল্লিকের পুত্রেরা। বর্ধমানের শ্রীখণ্ড এবং গুপ্তিপাড়া নিবাসী বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ রাধামাধব মল্লিকদের গুপ্তিপাড়ার বাড়িতে দুর্গাপুজোর চল ছিল বহু আগে থেকেই। তবে ভবানীপুরের বাড়ির অন্নপূর্ণা দালানে প্রথমে দুর্গা নয়, বরং তাঁরই অপর রূপ অন্নপূর্ণার আরাধনা শুরু হয়। পরবর্তীতে রাধামাধব মল্লিকের ছোট ছেলে সুরেন্দ্রমাধব মল্লিক এবং অন্যান্য ভাইদের উদ্যোগে মোহিনী মোহন রোডের এই বাড়িতে শুরু হয় এই পুজোর। 


জন্মাষ্টমীর পরের দিন কাঠামো পুজো করে মৃন্ময়ীকে রূপদান পর্ব চলে বাড়ির ঠাকুরদালানেই। বাড়ির কুলদেবতা শ্রীধর নারায়ণের পুজোর সঙ্গেই সঙ্গেই মহালয়া পরবর্তী প্রতিপদ থেকে চণ্ডীঘরে শুরু হয় চণ্ডীপুজো।


ষষ্ঠীতেই বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকামতে মল্লিকবাড়িতে শুরু হয় দেবী দুর্গার বোধন। বাড়ির আত্মীয়-পরিজনে ভরে ওঠে দুর্গাদালান। দুর্গতিহারিণীর প্রতি নিবেদিত ফুল-বেলপাতা-মন্ত্রে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে বাড়ি। এক একদিন একেক ফুলের মালা, এবং রুপোর ১০৮টি পদ্মমালায় দেবীকে সুসজ্জিতা করে তোলেন বাড়ির সদস্যরা। দেবীর পাশে রেখেই পুজো করা হয় শ্রীধর নারায়ণকে। গুপ্তিপাড়ার বৈষ্ণবমতেই পুজোর উপাচার চলে, তা সে সপ্তমীতে কলাবউ স্নান হোক, অষ্টমীতে কুমারী পুজো, অথবা নবমীতে হোম।


আরও পড়ুন, কেন নবমী তিথিকে মহাপুজো আখ্যা দেওয়া হয়?


পুজোতে কোন রকম বলির নিয়ম নেই। মহালয়ার পরের দিন যখন মা চন্ডীর ঘট বসে, তখন থেকে শুরু হয় চণ্ডীপাঠ। সেইসঙ্গে মায়ের বিসর্জন পযর্ন্ত নিরামিষ খাওয়ার রীতি। দশমীতে মায়ের বিদায়ের পর হয় আমিষ ভোজন। বৈষ্ণব বাড়ি বলে পুজোর দিনগুলিতে নিরামিষ খাওয়াদাওয়ার আয়োজন হলেও বিসর্জনের পর খাওয়া হয় পাঁঠার মাংস এবং মল্লিক বাড়ির ‘সিগনেচার ডিশ’, মেটেচচ্চড়ি। পুজোর প্রথমদিন থেকেই এই রান্নাটি একইভাবে হয়ে আসছে মল্লিক বাড়ির হেঁশেলে। বিজয়ার উৎসবের মাঝেই ঠাকুরদালানে আবার ফিরে আসে কাঠামো। রোশনাই-বিহীন মঞ্চে চলতে থাকে আগামী বছরের প্রস্তুতি।