অরিন্দম সেন,  আলিপুরদুয়ার : বাড়ির কারও মাটি দিয়ে মূর্তি গড়া বা শিল্পের প্রতি টান ছিল কিনা জানা নেই। বাবা - মা কেউই কোনও দিন মাটির মূর্তি গড়েননি। কিন্তু এ ছেলে বিস্ময় বালক ! নিজের আগ্রহেই গড়ে ফেলেছে দুর্গা মূর্তি । তা দেখতে এখন থেকেই ভিড় প্রতিবেশীদের। আলিপুরদুয়ারের শোভাগঞ্জ দ্বীপচর এলাকায় বাড়ি অঙ্কিতের। বয়স সবে ১৩। এখনই সে  মৃন্ময়ী মূর্তি গড়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সকলকে।  


পরিবারের লোকেরাও অবাক। তাঁদের বংশে আগে কেউ  মৃৎশিল্পে আগ্রহী ছিলেন বলে মনে পড়ে না।  পরিবারের আর্থিক অবস্থাও যে খুব একটা ভালো, তাও নয়। শহরের ফুটপাথে সবজি বিক্রি করেই সংসার চালান অঙ্কিতের বাবা। ১৩ বছরের ছেলেটার জগৎটা অন্যদের মতো নয় একেবারেই। গল্প - গাছা, খেলার মাঠ, টিভি বা মোবাইলের দুনিয়া নয়, তাকে টানে অন্য কিছু। মাটির তাল নিয়েই কাটিয়ে দিতে পারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। 

আট বছর বয়স থেকে বাড়ির পাশের নোনাই নদীর ধারে এঁটেল মাটি দিয়ে খেলার ছলে তার মূর্তি বানানো শুরু। একেবারে নিজেরই আগ্রহে।  তারপর সেই গড়ার নেশার টানেই কুমোরটুলির পাল পাড়ায় যাতায়ত। সেখানে গিয়ে একপ্রকার আবদার করেই মাটি নিয়ে আসত সে। তারপর চলত মূর্তি গড়ার প্রচেষ্টা। কচি কচি হাতে মাটির পুতুল, হাতি, গনেশ, কত কী যে গড়েছে সে। একটু একটু করে হাত তৈরি হয়েছে। এবার সে গড়েছে ছয় ফুটের দুর্গা। 


অঙ্কিতের বড় সাধ, নিজের হাতে গড়া মৃন্ময়ী মূর্তিকে চিন্ময়ী রূপে আবাহন করবে সে নিজেই। মন্ত্র পড়ে পুজো করবে নিজের হাতে গড়া দেবী মূর্তিতে। ইন্টারনেট থেকে মন্ত্র শুনে শুনে তা মুখস্থও করে ফেলেছে । শুধু দুর্গাই নয়, সঙ্গে কালী মূর্তি গড়েও পুজো করবে বলে স্থির করেছে সে। 


অঙ্কিতের কথায়, 'এটাই আমার সখ। আমার ভালো লাগে মাটি দিয়ে মূর্তি বানাতে। নিজেই পুজো করব বলে মূর্তি বানিয়েছি। এর জন্য ইতিমধ্যেই মন্ত্র-শ্লোক মুখস্থ করে ফেলেছি।' 


অঙ্কিতের মা গৃহবধু রূপন দেবনাথ । তিনি বললেন,  “খেলার ছলে শুরুটা হলেও, সেই ছোট থেকেই ছেলের মাটি দিয়ে পুতুল, মূর্তি বানিয়ে চলেছে। এখন একটা নেশা হয়ে গিয়েছে।  এবার দুর্গা মূর্তি বানাবার জেদ করেছিল। খরচের কথা চিন্তা করে বারণ করাও হয়েছিল, কিন্তু মানেনি। তবে, এখন খুবই ভালো লাগছে। প্রশিক্ষণ ছাড়াই ও নিজের মতো করেই এসব করে চলেছে। পাড়া-প্রতিবেশীরাও খুব উৎসাহ দেন ওকে।” 


অঙ্কিতের বাবা অনুকুল দেবনাথের কথায়, “আমার কাছে মাঝে মধ্যেই রঙ-সামগ্রী কেনার জন্য টাকা চাইতো। আমি দশ-বিশ টাকাই দিতাম। কিন্তু কীভাবে ও এতো বড় একটা মূর্তি গড়ে ফেললো বুঝতেই পারিনি।”  


প্রতিবেশী সুপ্রিয়া বণিক দাস জানালেন,  “খুবই ভালো লাগছে। ও একাই বানায় সব ধরনের মুর্তি। প্রতিদিনই দেখতে আসি কতটা এগিয়েছে ওর মূর্তির কাজ। নিজেই আবার পুজোও করবে। এবারের দুর্গাপুজোয় এখানেই পুজো দেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি।”