মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: পুলিশ (Police) বললেই যেন মনে ভেসে ওঠে রুক্ষ-কঠোর এক রূপ। কিন্তু মানবিক দিক যে দুঁদে গোয়েন্দা পুলিশেরও থাকতে পারে সেই নজিরই দেখা গেল। পরিবারহীন, মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে চিকিৎসা করিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দিলেন এক পুলিশকর্তা।
কী ঘটেছে?
ঘটনাটি দুর্গাপুরের (Durgapur) ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বেনাচিতি বাজারের। ২০১৩ সালের ১২ জানুয়ারি ঘরের দরজা ভেঙে উদ্ধার করতে হয় বিপুল কান্তি চক্রবর্তীর পচাগলা দেহ। স্ত্রী বিগত হয়েছেন তারও বছর তিনেক আগে। মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই একমাত্র ছেলে অর্ণব কান্তি চক্রবর্তী মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাবার মৃত্যুর পর ভারসাম্য আরও হারান বলে জানা যায়। স্থানীয় সূত্রে খবর, সম্পূর্ণ একা হয়ে যাওয়ার পর আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে বছর তিরিশের অর্ণব। এরপর রাস্তাতেই বাস। সেই সময়ে অর্ণব নজরে পড়েন বর্তমানে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিক মনোরঞ্জন মণ্ডলের।
প্রাথমিকভাবে খোঁজ খবর নিয়ে শ্রীরামপুরে অর্ণবের মামাদের খবর দেওয়া হলেও তাঁরা দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেন বলে খবর। সেই সময় অসহায়, তীব্র মানসিক অসুস্থ অর্ণবকে উদ্ধার করেন মনোরঞ্জনবাবু। অর্ণবকে তিনি হাজির করেন দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে। আদালতের নির্দেশে সরকারি হেফাজতে ও নিজে দেখভালের দায়িত্বে মনোরঞ্জনবাবু অর্ণবকে বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্যে ভর্তি করেন।
আরও পড়ুন, ভূগোলে স্নাতকোত্তর-বিএড, শিক্ষিকার চাকরি না পেয়ে হকারিকেই পেশা করলেন বৃষ্টি
মানবিক মনোরঞ্জন
প্রথম দু'মাস নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়ে ওষুধ কিনে দেন মনোরঞ্জনবাবু। নিয়ম করে খোঁজও নেন অর্ণবের। এবার প্রায় দশ বছর পর সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেন অর্ণব। বৃহস্পতিবার অর্ণবকে দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে নিয়ে আসেন দুঁদে গোয়েন্দা অফিসার মনোরঞ্জন মণ্ডল।
এদিকে, মূল স্রোতে ফিরে আসতে পেরে খুশি অর্ণব নিজেও। তিনি জানান, "কোথায় হারিয়ে যেতাম। আমাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা করিয়েছেন উনি। উনি আমার কাছে ভগবান।" মনোরঞ্জন মণ্ডল জানান, "মানবিক দিক থেকেই এটা করেছি। তৃপ্তি পেয়েছি। এটা আমাদের সকলের দায়িত্ব।" এদিন আদালত অর্ণবকে দেখে সন্তুষ্ট হয়ে তাকে ঘরে ফেরার অনুমতি দেয়। সুস্থ, স্বাভাবিক জীবনে ফেরার জন্যে নিজে থেকেই অর্ণবের একটি চাকরিও দেখে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন পুলিশ আধিকারিক মনোরঞ্জন মণ্ডল।