কলকাতা: ইনসাফ যাত্রার সাফল্যের রেশ ধরে কলকাতায় ব্রিগেড সমাবেশ বাম যুব সংগঠন DYFI-এর। আর সেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে জ্বালাময়ী ভাষণ দিতে শোনা গেল সংগঠনের নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় (Minakshi Mukherjee)। মীনাক্ষী জানালেন, বামপন্থীরা পাড়ায় রাজনীতি করতে গুঁতোগুতি করে না। বামপন্থীদের লড়াই একটি গলিতে, পঞ্চায়েতে, একজন বিধায়ক  বা সাংসদের লড়াই নয়। মীনাক্ষী জানান, পৃথিবীর বুকে যত দিন অপশাসন, লুঠ, অত্যাচার চলবে, যত দিন খেটে খাওয়া মানুষের টুঁটি চেপে ধরার ব্যবস্থা থাকবে, তত দিন রক্তবীজের ঝাড় বামপন্থীরা লডা়ই চালিয়ে যাবেন।  (DYFI Brigade Rally)


ব্রিগেডের সভায়য় এদিন সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী-সহ প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদত-সহ যুব সংগঠনের নেতা-নেত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। তবে সমাবেশের প্রধান আকর্ষণ ছিলেন মীনাক্ষীই। সেই রেশ ধরেই এদিন কমরেডদের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার বার্তা দেন মীনাক্ষী। তিনি বলেন, "এই প্রথম হাঁটলাম না আমরা। কখনও কলেজ তৈরির দাবিতে, কখনও বক্রেশ্বর-হলদিয়া পেট্রো কেমিক্যাল্স তৈরির জন্য, কখনও এ রাজ্যে সম্প্রীতি, শান্তি বজায় রাখার জন্য, হাঁটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। সংগঠনের আদর্শের প্রতি আস্থা, নেতৃত্বের দেখানো রাস্তা এবং সাধারণ মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে এই লড়াই চলছে। ইনসাফের লড়াই ক্ষণিকের লড়াই নয়, দীর্ঘ, অবিরাম লড়াই।"


মাঠে নেমে, চোখে চোখ রেখে বামপন্থীরা লড়াই চালিয়ে যাবে, সেখানে ধর্ম, ভাষার কোনও শর্ত থাকবে না বলেও এদিন জানিয়ে দেন মীনাক্ষী। তিনি বলেন, "বলেছিলাম, বড় মাঠে লড়াই হবে, যে মাঠে লড়াইয়ের শর্ত ধর্ম হবে না, যে মাঠে লড়াইয়ের শর্ত ভাষা হবে না, দেশের নাম India হবে না ভারত, সেই শর্ত থাকবে না, আপনি লুঙ্গি পরেন না ধুতি পরেন, টিকা লাগান না চুপি পরেন, ফ্রিজে কিসের মাংস রাখেন, এগুলো লড়াইয়ের শর্ত হবে না। লড়াইয়ের শর্ত হবে রুটি, লড়াইয়ের শর্ত হবে রুজি, লড়াইয়ের শর্ত হবে স্বচ্ছতা। আর সেই শর্ততেই গোটা মাঠের দখল নেবে মূল এজেন্ডার কারিগররা। তাই নকল যুদ্ধ ছাড়ো, আসল কথা বলো।"


আরও পড়ুন: DYFI Brigade: 'সাইকেলে চড়ে কোথায় যাবে? স্কুলটাই তো কেড়ে নিয়েছে' ব্রিগেড সমাবেশ থেকে আক্রমণ সৃজনের


বিজেপি এবং তৃণমূলকে একযোগে আক্রমণ করে মীনাক্ষী বলেন, "ধর্ম কার কাছে শিখতে যাব? দিল্লির কাছে ধর্ম হল, কচুকাটা করা। ধর্ম সবার থেকে শেখা যায় না। ধর্ম হল মানুষের ধর্ম, যে বাঁচতে জানে, হাত ধরে, বুকে টেনে, অন্যদের বাঁচাতে পারে। কোন গাধা, অকাট মূর্খরা বলে বামপন্থীরা শূন্য। বামেদের শূন্য হওয়ার মূল্য জানা নেই। আসলে ওরা বামপন্থঈদের শক্তিকে ভয় পায়। আমাদের কোনও আক্ষেপ নেই, রাগ নেই, কিন্তু আমাদের আশঙ্কা রয়েছে যে, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ রুটি-রুজির কথা বলছে না। দাঙ্গাবাজ, চোরেদের যদি এরা প্রচারক বাহিনী হয়ে যায়, তখন লড়াইয়ের মাঠে বাধা আসে। সেটাকে অতিক্রম করা বামেরা তুড়ি মেরে করে দেখাতে পারে। ৫০টা দিন কারও কাছে মুখ দেখাইনি। মনের মিল ঘটলে, মুখ খোলার প্রয়োজনই পড়ে না। রুটি-রুজির পক্ষে কথা বলছে বামেরা। শুধু হাঙ্গামা করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমাদের আসল কাজই হল, এই ব্যবস্থার বদল করা। সেই লড়াইয়ে আছি।"


মীনাক্ষী জানান, ছোট থেকে বাবার হাত ধরে ব্রিগেডে আসছেন তিনি। বলেন, "আজকের সমাবেশে তাঁর বাবা-মা এসেছেন। যখন লড়াই করতে শিখি, ব্রিগেডের মাঠে রাজনীতি করতে গেলে চোরেদের বাড়িতে জন্মাতে হবে শেখায়নি কেউ। ৭৫:২৫-এর ভাগ শেখায়নি কেউ। পাশের জনের হাত ধরতে শিখিয়েছে। কাঁধে করে কমরেডদের লাশ বয়েছি। মইদুল, সালেম, অমলা, বিদ্যুৎ মণ্ডলকে এখও চোখ বন্ধ করলে দেখতে পাই। মালা দিতে গেলে পা কাঁপে। লাশকাটা ঘর থেকে সুদীপ্ত, সইফুদ্দিনের লাশ যখন কাঁধে করে বার করে আনা হয়, এখনও পর্যন্ত সেই গন্ধ নাক থেকে যায়নি। ওদের কী করে ছেড়ে দেব? বেইমান হতে পারব না।"  যে সাহস, আশা, প্রত্যাশা নিয়ে মানুষ পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের জন্য লড়াই থেকে এক ইঞ্চি জায়গাও বামপন্থীরা ছেড়ে দেবেন না বলে এদিন জানান মীনাক্ষী।