কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান: পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে আবাস যোজনায় বরাদ্দ বাড়ি ঘিরে নতুন বিতর্ক। তৃণমূলের বিরুদ্ধে বাড়ি দখল করে পার্টি অফিস চালানোর অভিযোগ উঠেছে। আবাস যোজনায় তৈরি উপভোক্তার বাড়ি, নাকি তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়, ৩ বছর পরেও উত্তর  অধরা। ঘটনা ঘিরে তুঙ্গে উঠেছে তৃণমূল-বিজেপি তরজা। অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জামালপুরের বিডিও।


উপভোক্তার নামে বরাদ্দ হয়েছিল সরকারি প্রকল্পে বাড়ি। অভিযোগ, সেই ঘর উপভোক্তাকে না দিয়ে পার্টি অফিস হিসেবে ব্যবহার করছিল তৃণমূল কংগ্রেস। ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর বছর দেড়েক আগে সেই বাড়ি ফিরিয়েও দেওয়া হয়েছিল উপভোক্তাকে। কিছুদিন সেই ঘরে ঠাঁই হলেও, অভিযোগ, সেখানে এখন ফের রমরমিয়ে চলছে তৃণমূল কার্যালয়।


প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বাড়ি নিয়ে এমনই অভিযোগ উঠল পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে। বছরখানেক আগে মৃত্যু হয়েছে উপভোক্তা শঙ্কর মাঝির। অভিযোগ, তারপর থেকেই আবাস যোজনায় প্রাপ্ত ঘরের বদলে উপভোক্তার পরিবার বাস করছেন দামোদরের বাঁধের পাশে অ্যাসবেস্টসের ছাউনি দেওয়া একচিলতে ঘরে। 


অভিযোগকারী পরিবারের সদস্যের  পরিতোষ মালিকের কথায়, শঙ্কর মাঝির নামে সরকারি ঘর এলে সেই ঘর এখন তৃণমূলের পার্টি অফিস করা হয়েছে।বদলে বাঁধের ধারে একটি বাড়ি করে দেওয়া হয়েছে।


২০১৮-১৯ সালে বাড়ি তৈরির প্রকল্পে এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা অনুদান পান জামালপুরের কাঠুরিয়া গ্রামের শঙ্কর মাঝি। ওই টাকায় বাড়ি তৈরির পরেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে সেটি দখল করে দলীয় কার্যালয় বানানোর অভিযোগ ওঠে। কিন্তু আবাস প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ি কীভাবে পরিণত হতে পারে শাসকদলের কার্যালয়ে? অভিযোগ সামনে আসার পরেই পরস্পর বিরোধী মন্তব্য শোনা গেল তৃণমূলের অন্দরে।


পূর্ব বর্ধমান জামালপুরের তৃণমূল নেতা রামরঞ্জন সাঁতরার কথায়, এটা আমাদেরই অফিস। তার যাবতীয় নথি আমাদের কাছে আছে। কে কীভাবে কোথায় ছবি তুলেছেন তা বলতে পারবো না। এমনকি বাঁধের বাড়ি নিয়ে পঞ্চায়েতই ভালো বলতে পারবে।


জামালপুর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল নেতা ও উপপ্রধান উদয় দাসের কথা, শঙ্কর মাঝিকে এই নীলসাদা বাড়িটিই দেওয়া হয়েছিল। সেই অনুযায়ী অভিযোগ আসতেই আমরা বাড়িটি দখলমুক্ত করে শঙ্কর মাঝিকে তুলে দিই। এরপর আবার কী করে সেখানে তৃণমূল অফিস হলো বা কী করেই বা বাঁধের ধারে সরকারি আবাস যোজনার বাড়ি হল তা জানা নেই। এমনকি পঞ্চায়েতের তরফে বাঁধের ধারের কোনো বাড়িতে আবাস যোজনা প্রকল্প নিয়ে কিছু লেখাও হয়নি। খোঁজ নিয়ে দেখছি। 


নতুন করে বিতর্ক দানা বাঁধতেই অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন জামালপুরের বিডিও। যদিও, এনিয়ে আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপি। 


পূর্ব বর্ধমানের  জামালপুরের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদারের, ২০১৯ সালে এই ধরনের অভিযোগ উঠতেই পঞ্চায়েতকে দায়িত্ব দেওয়া হয় অভিযোগ খতিয়ে দেখতে। পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে বলা হয় সমস্যা মিটে গেছে। বর্তমানে আবার অভিযোগ উঠেছে তাই আমাদের তরফে ব্লকের ভূমি দপ্তরের আধিকারিকের সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে। কোন দাগ নম্বরে আবাস যোজনার বাড়িটি এসেছিলো তা খতিয়ে দেখার পরই বিস্তারিত বলা যাবে।


পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের বিজেপি যুব মোর্চার আহ্বায়ক অজয় ডকাল বলছেন, কর্তৃত্ব জাহির করতেই নিজেদের প্রশাসনের নির্দেশকে অমান্য করে উপভোক্তাকে তাড়িয়ে দিয়ে আবাস যোজনার ঘর দখল করেছে তৃণমূলের নেতারা। কিছু দিন আগে দেওয়ালে লেখা আবাস সংক্রান্ত তথ্যও মুছে দিয়েছে। এখন দেখার, এই বিতর্কের জল কতদূর গড়ায়।