খণ্ডঘোষ: কর্ণাটকে অপারেশন লোটাসের আদলে এবার বাংলায় অপারেশন জোড়াফুল? পঞ্চায়েতের রাশ হাতে রাখতে দলের জয়ী প্রার্থীদেরই অপহরণের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। খণ্ডঘোষ ব্লকের শসঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের জয়ী ১২ জন তৃণমূল প্রার্থী ৫ অগাস্ট সুন্দরবনে যান। অভিযোগ, গতকাল ফেরার সময়, বাস থামিয়ে তাঁদের নামিয়ে নিয়ে যায় খণ্ডঘোষের তৃণমূল বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগের অনুগামীরা।


গোসাবার একটি হোটেলে নিয়ে গিয়ে আটকে রেখে জয়ী তৃণমূল প্রার্থীদের মারধর করে জিনিসপত্র কেড়ে নেওয়া হয়। এদের মধ্যে ৫ জনকে অপহরণ করে নিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে বাকি ৭ জনকে হোটেল থেকে উদ্ধার করে বাসন্তী থানার পুলিশ। এখনও শসঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫ জয়ী তৃণমূল প্রার্থীর খোঁজ মেলেনি বলে অভিযোগ। তৃণমূল বিধায়কের প্রতিক্রিয়া এখনও মেলেনি।


বোর্ড গঠনের আগে জেলায় জেলায় জয়ী প্রার্থীদের অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বেলাকোবা গ্রাম পঞ্চায়েতের জয়ী বিজেপি প্রার্থীকে অপহরণের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। যদিও শাসকদলের দাবি, অপহরণ নয়, স্বেচ্ছায় তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন জয়ী বিজেপি প্রার্থী। 


এদিকে বোর্ড গঠনের দিনই, জলপাইগুড়ির বেলাকোবা গ্রাম পঞ্চায়েতের নিখোঁজ জয়ী বিজেপি প্রার্থীকে জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে পেশ করে পুলিশ। আদালতে সরকারি আইনজীবীর দাবি, বিজেপি প্রার্থী পূর্ণিমা রায়কে কেউ অপহরণ করেনি। জোর করে তাঁকে কেউ আটকেও রাখেনি। তিনি স্বেচ্ছায় পরিবারকে নিয়ে বাইরে ছিলেন। আদালতে নিজেই সেকথা জানিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী। এ বিষয়ে পুলিশ-প্রশাসনকে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় জলপাইগুড়ি সার্কিট বে়ঞ্চের ডিভিশন বেঞ্চ। যাঁকে অপহরণের অভিযোগ ঘিরে এত কাণ্ড, সেই জয়ী বিজেপি প্রার্থী পূর্ণিমা রায় অবশ্য আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে মুখ খোলেননি। কাল ছিল জলপাইগুড়ির বেলাকোবা গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের দিন। বিজেপির জয়ী প্রার্থীকে অপহরণ করে তৃণমূলে টানার অভিযোগ ঘিরে সরগরম এলাকার রাজনীতি। ৩১ জুলাই থেকে নিখোঁজ ছিলেন জয়ী বিজেপি প্রার্থী পূর্ণিমা রায়! আজই তাঁকে কোর্টে পেশ করতে হবে. IC-কে নির্দেশ দিয়েছিল জলপাইগুড়ি সার্কিট বে়ঞ্চ। সেই নির্দেশমতো জয়ী বিজেপি প্রার্থীকে আদালতে হাজির করল পুলিশ। 


২৯ আসনের বেলাকোবা গ্রাম পঞ্চায়েত। এবারের পঞ্চায়েত ভোটে সেখানে ১৫টি আসনে জেতে বিজেপি, তৃণমূল জেতে ১২টিতে এবং নির্দল প্রার্থী জেতেন ২টি আসনে। তারপরই ভাইরাল হয় একটি ভিডিও, যেখানে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে জয়ী দুই নির্দল প্রার্থী এবং জয়ী বিজেপি প্রার্থী পূর্ণিমা রায়কে দেখা যায়। তৃণমূল দাবি করতে থাকে, তাঁদের জয়ী আসন সংখ্যা ১৫ হয়ে যাওয়ায়, তারাই বোর্ড গঠন করবে। বিজেপির অভিযোগ, পঞ্চায়েত দখল করতে, তাঁদের জয়ী প্রার্থী ও তাঁর স্বামীকে অপহরণ করেছে তৃণমূল। থানায় অপহরণের লিখিত অভিযোগ করেন বিজেপি প্রার্থী পূর্ণিমা রায়ের ছেলে। অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূল দাবি করে, স্বেচ্ছায় তাঁদের দলে এসেছেন বিজেপি প্রার্থী। সরকারি আইনজীবীর দাবি, তৃণমূলে যোগ দেওয়া বিজেপি প্রার্থী আজ আদালতে জানিয়েছেন, তাঁর ছেলেকে ভুল বুঝিয়ে FIR করিয়ে গল্প বানিয়েছে বিজেপি। বন্দুক ঠেকিয়ে রাখলে কী আর কেউ সত্যি কথা বলে। পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছে গেরুয়া শিবির। 


উল্লেখ্য, উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ায়, গ্রাম পঞ্চায়েতের পরাজিত তৃণমূল প্রার্থীকে আটকে রাখার অভিযোগ ওঠে তাঁরই দলের সদস্য়দের বিরুদ্ধে। পরিবারের অভিযোগ, বিরোধী প্রার্থীর জয়ের শংসাপত্র পাওয়া আটকে দিতেই, তৃণমূল প্রার্থীকে আটকে রাখা হয়। যদিও ২০ ঘণ্টা পর, তৃণমূল প্রার্থীকে উদ্ধার করে পুলিশ। অন্য়দিকে, ভোটের ফল ঘোষণার পর থেকেই খোঁজ মিলছে না, বীরভূমের মল্লারপুরের জয়ী বিজেপি প্রার্থীর স্বামীর।