কলকাতা : অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) বিদেশ সফরে নজরদারি চালাতে বিদেশ মন্ত্রকের মাধ্যমে দুবাই সরকারের কাছে আবেদন ইডি-র (Enforcement Directorate)। খবর সূত্রের। ইডি সূত্রে খবর, ওই চিঠিতে অভিষেক ও রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুবাই সফর সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, জানানো হয়েছে কয়লা পাচারকাণ্ডে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদের কথা। 


অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় চোখের চিকিত্সার জন্য দুবাই গিয়েছেন, এই তথ্যও ইডি-র চিঠিতে জানানো হয়েছে বলে সূত্রের খবর। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সফরে নজরদারি চালানোর জন্য বিদেশ মন্ত্রকের মাধ্যমে দুবাই সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে ইডি, খবর সূত্রের। 


১ জুন থেকে ১০ জুন পর্যন্ত যেন কয়লা পাচারকাণ্ডের তদন্তে তাঁকে ডেকে পাঠানো না হয়। এই আবেদন জানিয়ে ED’কে চিঠি পাঠান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। জবাবে ED’র তরফে তাঁকে দেশ ছাড়তে নিষেধ করা হয়। ED’র নিষেধাজ্ঞায় স্থগিতাদেশ চেয়ে আদালতে দ্বারস্থ হন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। 


বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনাতিতে তাঁর আইনজীবী বলেন, ৩রা জুন চোখ পরীক্ষার দিন নির্ধারিত রয়েছে। ২০২০’র নভেম্বরে কয়লা পাচার মামলা শুরু হওয়ার পরেও দুবার বিদেশ যাত্রা করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাহলে এখন এই নিষেধাজ্ঞার কারণ কী ? ED এখনও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তলব করেনি। অভিষেক নিজে চিঠি দিয়ে তাঁর সমস্যার কথা ED’কে জানিয়েছেন। তারপরও ED’র এই আচরণ কেন ? অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও মামলায় অভিযুক্ত নন।


তখন হাইকোর্টে ED’র আইনজীবী বলেন, সুপ্রিমকোর্ট বলেছে যে, ২৪ ঘণ্টা আগে নোটিস দিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডেকে পাঠাতে পারবে ED। এখন ED যদি তাঁকে আগামীকাল নোটিস পাঠায় তাহলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিনি কীভাবে হাজিরা দেবেন। তাহলে তো সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অমান্য করা হবে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবে দুর্ঘটনা ঘটেছিল ? কে চিকিৎসা করবেন ? কোন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা হয়েছে? কার অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া হয়েছে, সেগুলো কিছুই তিনি বলেননি। বিনয় মিশ্র প্রায় ৭৩০কোটি টাকা দুর্নীতিতে যুক্ত এবং দুবাই পালিয়ে গেছেন। তিনি ওখানকার স্থায়ী বাসিন্দা। 


তখন বিচারপতি বলেন, আপনারা (ED) যখন জানেন যে, বিনয় মিশ্র দুবাইতে রয়েছেন, তখন তাঁকে গ্রেফতার করতে কী পদক্ষেপ করেছেন আপনারা ? তখন ED’র আইনজীবী বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিস জারি হয়েছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দুবাই গিয়ে বিনয় মিশ্রর সঙ্গে দেখা করতে পারেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দুবাই পালিয়ে যেতে পারেন বলে আশঙ্কা। বিনয় মিশ্রর সঙ্গে অভিষেক একাধিকবার সফর করেছেন। কী এমন সমস্যা হয়েছে যে তাঁর চিকিৎসা ভারতে হচ্ছে না ? চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য গোপন করছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রীকেও আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারি।
তিনিও যদি দুবাই চলে যান তাহলে কি করে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব। তাঁর (রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের) তো কোনও অসুস্থতা নেই।


২৬ মে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানতে পারেন যে, দুবাইতে তাঁর অ্যাপোয়েন্টমেন্ট ৩রা জুন নির্ধারিত হয়েছে। তিনি ১ জুনের বিমানের টিকিট কাটেন। ১০ জুন দুবাই থেকে ফেরার টিকিট করা হয়েছে। ৩১ মে তিনি চিঠি দিয়ে ED’কে এই কথা জানান। দুবাই চিকিৎসার জন্য বিখ্যাত নয়। তাই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই চিকিৎসার জন্য বিদেশযাত্রার যুক্তি সঠিক নয়।


এরপরই কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশে বলে, বিমানের টিকিট, দুবাইয়ের হাসপাতালের ঠিকানা, ফোন নম্বর এবং দুবাইয়ে যেখানে থাকবেন সেখানকার ঠিকানা, ফোন নম্বর ED’কে জানাবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।


অভিষেক ও রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম FIR’এ নেই। তাঁদের আগেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ED’র দিল্লির অফিসে একাধিকবার হাজিরা দিয়েছেন। তাঁর নামে নতুন করে কোনও সমন জারি করা হয়নি। তাঁরা প্রয়োজনীয় নথিও জমা দিয়েছেন। তাই একথা বলা যায় না যে, তাঁরা তদন্তে সাহায্য করছেন না। সুপ্রিম কোর্ট অভিষেক ও রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গতিবিধি নিয়ন্ত্রিত করেনি। যেহেতু হাসপাতাল বলেছে যে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একজন যেতে পারেন, তাই রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যেতে কোনও বাধা নেই। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একজন সাংসদ। তিনি মামলা শুরুর পরেও একাধিকবার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। তাই তিনি দুবাই বা দুবাই থেকে অন্য কোথাও পালিয়ে যাবেন এই আশঙ্কা অমূলক। 


আশ্চর্যজনক ভাবে ED বলছে যে তারা জানেন যে বিনয় মিশ্র দুবাইতে আছেন এবং অভিষেক তার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন। অথচ তাঁরা বিনয় মিশ্রকে গ্রেফতার করতে বা সত্য উদ্ঘাটিত করতে কিছুই করছেন না। বেঁচে থাকা এবং চিকিৎসার অধিকার মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। মানুষ নিজের সিদ্ধান্তে যে কোনও জায়গায় চিকিৎসার জন্য যেতে পারেন। কোনও সরকার চিকিৎসার অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।


এদিকে দুবাই যাওয়ার আগে হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে সফর সংক্রান্ত নথি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট-এর দফতরে জমা দেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ইডি সূত্রে খবর, বিমানের টিকিট, দুবাইয়ের হাসপাতালের ঠিকানা, ফোন নম্বর সংক্রান্ত তথ্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সংস্থার কলকাতা ও দিল্লির অফিসে পাঠিয়ে দেন।