কলকাতা : নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আদালতে চার্জশিট জমা করেছে ইডি। চার্জশিটে নাম রয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের। সেই সঙ্গে নিয়োগ দুর্নীতিতে পার্থ-অর্পিতা-সহ ৮ জনের বিরুদ্ধে দেওয়া ইডির চার্জশিটে পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের উল্লেখ রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।


 বেসরকারি কলেজ থেকে টাকা তোলার অভিযোগ
নিয়োগকাণ্ডে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর জড়িত থাকার প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে চার্জশিটের ছত্রে ছত্রে মানিক ভট্টাচার্যের যোগসূত্রের কথা উল্লেখ করেছে ইডি। টেট নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি ও পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য । চার্জশিটে বলা হয়েছে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে তাঁর ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি মানিক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে বেসরকারি কলেজ থেকে টাকা তোলা,হুমকি দেওয়া, ইন্টারভিউয়ে প্রাপ্ত নম্বরের উল্লেখ ছাড়া নদিয়ার টেটের মাস্টার শিট চেয়ে চেয়ারম্যানকে চাপ দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ তুলে মেসেজ করেন।


ইডির চার্জশিটের ছত্রে ছত্রে পার্থর সঙ্গে মানিক ভট্টাচার্যের যোগসূত্র থাকার অভিযোগ ইডির চার্জশিটে। জানা গিয়েছে,



  • পার্থর মোবাইল ফোনে মানিক ভট্টাচার্য ল বলে নম্বর সেভ করা ছিল মানিকের। পার্থ চট্টোপাধ্যায় হোয়াটস অ্যাপ চ্যাটে মানিকের সঙ্গে কথোপকথনও হয়। ১০ মিনিটের জন্য তোমার বাড়ি যাব বলে পার্থকে মানিকের বার্তাও রয়েছে।

  • ২০২০ সালে পার্থকে মানিকের হোয়াটসঅ্যাপ ছিল। তাতে ওকে বলে জবাব পার্থর। 

  • টেটের পরীক্ষা চলাকালীন মানিকের নম্বর থেকে পার্থর কাছে হোয়াটসঅ্যাপও আসে বলে জানা যায়। দুর্নীতি নিয়ে মানিকের বিরুদ্ধে পার্থর কাছেই অভিযোগ গিয়েছিল !

  • মানিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পরে কী করেছিলেন পার্থ? ইডির ১৭২ পাতার চার্জশিটে পার্থর সঙ্গে মানিকেরও প্রসঙ্গ রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তৎকালীন সভাপতির বিরুদ্ধে পার্থকে এসএমএস করেন এক ঘনিষ্ঠ। লেখেন, ‘দাদা, মানিক ভট্টাচার্য যা তা ভাবে টাকা তুলছে, করোনার সময়ে বেসরকারি কলেজ থেকে ছাত্র পিছু ৫০০ টাকা করে টাকা তুলছেন মানিক ভট্টাচার্য। ছাত্ররা না দিতে পারলে, কলেজ থেকে আদায় করা হচ্ছে হুমকি দিয়ে।  ‘দাদা মানিক ভট্টাচার্য ইজ টেকিং মানি, যা তা ভাবে’

  • মানিকের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ জানিয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে এসএমএস করে জানানো হয়, নদিয়ায় টেট ইন্টারভিউ শেষ হয়েছে, সই ছাড়াই ডকুমেন্ট শিট জমা করতে বলছে। সইয়ের জায়গা ফাঁকা রেখে ডকুমেন্ট শিট, ইন্টারভিউয়ের নম্বর লিখতেও বারণ করেছে। 


কী পদক্ষেপ নেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ ?
মানিক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার বদলে তাঁকেই অভিযোগ সম্বলিত মেসেজটি ফরোয়ার্ড করে দেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। মানিক-যোগ সম্পর্কে এমনই উল্লেখ করা হয়েছে চার্জশিটে। নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে মানিক ভট্টাচার্যকে ইতিমধ্যেই কয়েকদফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। টেট-দুর্নীতির মামলায়, সিবিআই এবং ইডি, দুই এজেন্সিরই স্ক্যানারে রয়েছেন, তৃণমূল বিধায়ক ও প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি, মানিক ভট্টাচার্য। 


২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি হয়েছিলেন মানিক ভট্টাচার্য। গতবছর সেই পদে থেকেই, তৃণমূলের হয়ে বিধানসভা ভোটে লড়াই করেন এবং জিতে বিধায়ক হন তিনি। এখন ২০১৪ সালের প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের টেটে, দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। আট বছর পর, এখন সেই টেট-দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় রাজ্য। তদন্তে নেমে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই এবং ইডি। 
দুর্নীতির জাল কীভাবে ছড়িয়ে? ইডির চার্জশিটে ছত্রে ছত্রে উল্লেখ রয়েছে। ঘনিষ্ঠের অভিযোগ পেয়েও কেন নীরব ছিলেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী? কেন পদক্ষেপ না করে অভিযুক্তের কাছেই মেসেজ ফরোয়ার্ড করলেন পার্থ? তাই নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।