প্রকাশ সিনহা, কলকাতা : ওয়েলথ উইজার্ড প্রাইভেট লিমিটেড, আর্কাইভ কনসালটেন্সি ও SD কনসালটেন্সি, তিনটি কোম্পানিরই নিয়ন্ত্রণ ছিল কালীঘাটের কাকুর হাতে। ED সূত্রে দাবি, জেরায় স্বীকার করেছেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র (Kalighater Kaku ) ।


আগেই এই সংস্থার ডিরেক্টররা দাবি করেছিলেন, কোম্পানির সবকিছু ঠিক করতেন কাকুই। তদন্তে উঠে এসেছে লেনদেন সংক্রান্ত আরও বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্য়কর তথ্য়। যেমন, 


এই ট্র্য়ানস্য়াকশনের কারণ কী? ED সূত্রে দাবি, কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি কাকু। শুধু তাই নয়, চাকরি বিক্রির ৭০ লক্ষ টাকা কোনও ব্য়াঙ্ক অ্য়াকাউন্টের মাধ্য়মে নয়, সুজয়কৃষ্ণকে দেওয়া হয়েছিল নগদ। সেই টাকা কোন কাজে ব্য়বহার করেছেন সুজয়কৃষ্ণ? কোথায় ইনভেস্ট করেছেন, তাঁর খোঁজ করছেন আধিকারিকরা। 


এছাড়াও ED-র দাবি,  চাকরি-বিক্রির বৈঠক হত প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অফিসেই। নিজের কাজ করানোর জন্য সেখানে তৎকালীন পর্ষদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যর কাছে আসতেন কালীঘাটের কাকু ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। এখানে বসেই তৈরি হত, অযোগ্য় চাকরিপ্রাপকদের তালিকা। দেওয়া হত নিয়োগপত্র। 


সূত্রের খবর, বুধবার সারাদিন উপবাসের পর, বৃহস্পতিবার খাবার মুখে তোলেন কালীঘাটের কাকু। কিন্তু ইডির সামনে কার্যত ভেঙে পড়েন তিনি, কেঁদে ফেলেন! সূত্রের খবর, শুধু তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যের মোবাইল ফোনের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট হিস্ট্রি নয়, মানিক ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডলকে জেরা করে সুজয়কৃষ্ণ সম্পর্কে প্রচুর তথ্য মিলেছে। ইডি-র দাবি, জেরায় তাপস মণ্ডল জানিয়েছেন, ২০১৪-র টেটের জন্য ৩২৫ জন চাকরিপ্রার্থীর তালিকা সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রর হাত দিয়ে মানিকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। চাকরিবিক্রির মোট ৩ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা তাপস মণ্ডলের কাছে থেকে নিয়েছিলেন কুন্তল ঘোষ। সুজয়কৃষ্ণ-মানিক-কুন্তল, এই তিনজনের আঁতাঁতেই কোটি কোটি টাকায় চাকরি বিক্রি হয়েছে বলে ইডির দাবি। 


এছাড়াও তার সম্পর্কে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ২০১৬ সালের বিধানসভা ও ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের সময় নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রর বেহালার বাড়িতে তৈরি হয় তৃণমূলের নির্বাচনী কার্যালয়। এমনটাই দাবি কালীঘাটের কাকুর পাড়ার বাসিন্দাদের একাংশের। সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র বিরুদ্ধে বুথ দখল করে ভোট করানোর অভিযোগেও সরব হয়েছেন কলকাতা পুরসভার ১২৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন সিপিএম কাউন্সিলর। 


তৃণমূলের অন্দরে কি অত্য়ন্ত সক্রিয় ছিলেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র? তাঁর প্রভাব কি মারাত্মক ছিল? সেই জন্যই কি রকেট গতিতে উত্থান 'কালীঘাটের কাকুর'? নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত কালীঘাটের কাকু ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের বিষয়ে জোরালো হল এই প্রশ্নই।