হিন্দোল দে, কলকাতা: পেট্রাপোলে রয়েছে শঙ্কর আঢ্যর মানি এক্সচেঞ্জের অফিস। ২০-৩০ বছর ধরে সেখানে শঙ্কর আঢ্য কারবার চালাচ্ছেন বলে জানাচ্ছে চেক পোস্ট ওয়েলফেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন। সেই অফিসই এখন পড়ে রয়েছে তালাবন্ধ অবস্থায়। এদিকে শঙ্কর আঢ্যর পাড়ারই শিল্পী তাঁর বিরুদ্ধে আনলেন বিস্ফোরক অভিযোগ।
রেশন দুর্নীতি মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছেন তৃণমূল পরিচালিত বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্য। তাঁকে আদালতে পেশ করে বিস্ফোরক দাবি করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। এক-দু কোটি বা পাঁচশো-হাজার নয়, রেশনে দুর্নীতির অঙ্কটা ৯ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা! এমন কি দুর্নীতির এই অঙ্ক আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে ইডি! আর এই আবহেই, পেট্রাপোল সীমান্তে শঙ্কর আঢ্যর অফিসে পৌঁছে গিয়েছিল এবিপি আনন্দ। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে শঙ্কর আঢ্যের মানি এক্সচেঞ্জের অফিস।
পেট্রাপোল চেক পোস্ট ওয়েলফেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি অশোক ঘোষ বলেন, 'এই অফিস খোলা হয়নি,বাংলাদেশে ভোট চলছে বলে বন্ধ। ২০-৩০ বছর ধরে ব্যবসা করে। ওর ওখান থেকেই অনেক লাইসেন্স আমার বের করিয়েছে।' কিন্তু এলাকায় ঠিক কতখানি প্রভাব প্রতিপত্তি ছিল শঙ্কর আঢ্যর? বনগাঁর শিমূলতলা এলাকার বাসিন্দা সিন্টু ভট্টাচার্য। পেশায় শিল্পী সিন্টুকাজ করেন বিভিন্ন মূর্তি তৈরির। শঙ্কর আঢ্যর বিরুদ্ধে রীতিমতো চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করছেন তিনি। যিনি আবার তৃণমূল কর্মীও।
শিল্পী ও তৃণমূলকর্মী সিন্টু ভট্টাচার্য বলেন, বছরখানেক আগে একটি সংবাদমাধ্যমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লাইভ অনুষ্ঠানে বলেছিলাম জ্যোতিপ্রিয় উত্তর ২৪ পরগনাকে পুরো নষ্ট করে দিচ্ছে ,বিষয়টি দেখতে বলে অনুরোধ করেছিল। এরপরই জ্যোতিপ্রিয় ও শঙ্কর আঢ্য মিলে থানায় একাধিক কেস করে। বাড়িতে হামলা হয় শঙ্করের নেতৃত্বে।এই মুহূর্তে 'প্রাণহানির আশঙ্কা' করছেন এই শিল্পী।
এমনকি, তাঁর বাড়ি ঘিরে দেওয়া হয়েছে কাঁটাতার দিয়ে। বনগাঁর শিমূলতলায় শঙ্কর ঘোষের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল শুনশান গোটা বাড়ি। বাড়িতে ২-১ জন সদস্য রয়েছেন বটে,কিন্তু কথা বলতে রাজি হননি কেউই। শঙ্কর আঢ্যর বাড়ি থেকে কিছুটা দূরেই তাঁর শ্বশুরবাড়ি। শঙ্কর আঢ্যর স্ত্রী জ্যোৎস্না আঢ্যর মা-ও অবশ্য এই নিয়ে তেমন কিছু বলতে নারাজ।
আরও পড়ুন, আগ্রা-চেন্নাইয়ে বাড়ল পেট্রোল-ডিজেলের দর, কলকাতায় জ্বালানির দর কী ?
প্রসঙ্গত, ED-র দাবি, ধান-চাল-গম কেনাবেচা নয়, রেশন দুর্নীতির কালো টাকা কোন পথে, কীভাবে ঘুরিয়ে সাদা করা হবে, সেই পরিকল্পনায় শঙ্কর আঢ্যর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। কলকাতার মার্কুইস স্ট্রিটে শঙ্কর আঢ্যর কারেন্সি লেনদেনের সংস্থা, আঢ্য ফোরেক্স প্রাইভেট লিমিটেডের অফিস। ফুল ফ্লেজ মানি চেঞ্জার হিসেবে কাজ করে এই কোম্পানি। ED-র দাবি, রেশন দুর্নীতির কালো টাকা দিয়ে তৃণমূল নেতার এই কোম্পানির মাধ্যমে ঘুরিয়ে কেনা হয়েছে সোনা, বিদেশি মুদ্রা। হাওয়ালার মাধ্যমে বাইরে টাকা পাঠানো হয়েছে। ED-র দাবি, রেশন দুর্নীতি তদন্তে উঠে আসে শঙ্কর আঢ্যর নাম। তারপরই তার বিভিন্ন আস্তানায় তল্লাশি ও শেষমেষ গ্রেফতার করা হয়।