অরিত্রিক ভট্টাচার্য, কলকাতা: জমি-বিতর্কে বিশ্বভারতীর (Visva Bharati) উচ্ছেদের নোটিসের পর, অমর্ত্য় সেনের পাশে দাঁড়ালেন বিদ্বজ্জনরা। বৃহস্পতিবার নন্দন (Nandan) থ্রি-তে সভা করে, নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করে সামাজিক মর্যাদা রক্ষা সমিতি নামে নামে সংগঠন। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদকে হেনস্থার নিন্দায় সরব হয়েছেন অনিতা অগ্নিহোত্রী, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, দেবশঙ্কর হালদারের মতো বিদ্বজ্জনরা। 


তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindra Nath Tagore) সহযোগী, আচার্য ক্ষিতিমোহন সেনের নাতি। তাঁর নাম রেখেছিলেন স্বয়ং কবিগুরু। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ সেই অমর্ত্য় সেনের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ তুলে উচ্ছেদের নোটিস ঝুলিয়েছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্য়ালয় (Visva Bharati University) কর্তৃপক্ষ। 


যা নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে বিভিন্ন মহলে। এবার এনিয়ে সভা করে নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করলেন বিদ্বজ্জনরা। বৃহস্পতিবার নন্দন (Nandan) থ্রি-তে একটি সভা করে সামাজিক মর্যাদা রক্ষা সমিতি নামে এই সংগঠন। অমর্ত্য় সেনের পাশে দাঁড়িয়ে, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের আচরণের তীব্র নিন্দা করেন বিদ্বজ্জনরা। 


বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, তাদের ১৩ ডেসিমল জমি অমর্ত্য সেনের বাড়ি প্রতীচীর মধ্যে ঢুকে রয়েছে। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের পাল্টা দাবি, প্রতীচীর জমি তাঁর বাবা কিনেছিলেন। উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি তা ভোগ করছেন।


১৪ এপ্রিল নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের বাড়িতে নোটিস ঝোলায় বিশ্বভারতী।  যার পাল্টা আইনজীবী মারফত চিঠি পাঠান নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ (Amartya Sen)। তারপরই ৬ মে-র ডেডলাইন দিয়ে সরাসরি উচ্ছেদের নোটিস দেয় বিশ্বভারতী। 


নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জায়গা খালি না করলে বলপ্রয়োগের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়। অমর্ত্য় সেনের (Amartya Sen) মতো বিশ্ববরেণ্য় ব্য়ক্তির সঙ্গে এই আচরণ মেনে নিতে পারছেন না বিদ্বজ্জনরা। 


জমি বিতর্কে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ এবং অমর্ত্যের টানাপোড়েন নিয়ে ট্যুইটারে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কৌশিক। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদকে তাঁর শান্তিনিকেতনের বাড়ির ১৩ ডেসিমেল জমি খালি করার জন্য উচ্ছেদ-নোটিস দিয়েছে বিশ্বভারতী। তার তীব্র নিন্দা করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু (Kaushik Basu)।। অমর্ত্যকে যে ভাবে হয়রান করা হচ্ছে, তা গোটা দেশের লজ্জা বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। 


ট্যুইটারে কৌশিক বসু লেখেন, 'বিশ্বভারতীর তরফে যে ভাবে অমর্ত্য সেনকে হয়রান করা হচ্ছে, তাঁকে উচ্ছেদ নোটিস ধরানো হয়েছে, তা ভারতের জন্য লজ্জার। অমর্ত্য ভারতের নাগরিক এবং গোটা বিশ্বের কাছে বরেণ্য। সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গির জন্যই অমর্ত্যের বিরুদ্ধে বিশ্বভারতীর এই পদক্ষেপ। ভারতীয় গণতন্ত্রের পক্ষে শোভনীয় নয়'।


কৌশিক বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, আমেরিকার খ্যাতনামা কর্নেল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক। বিশ্বব্যাঙ্কের মুখ্য উপদেষ্টা হিসেবেই কর্মরত ছিলেন তিনি। অমর্ত্যের প্রতি বিশ্বভারতীর আচরণে যে ভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন তিনি, তাতে এখনও পর্যন্ত বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে বিষয়টি যে বাংলার গণ্ডি ছাড়িয়ে অন্যত্রও পৌঁছেছে, তা বুঝতে বাকি থাকে না। 


এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সৌরীন ভট্টাচার্য, গৌতম হালদাররা। ৫ মে শান্তিনিকেতনে, একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্য়মে প্রতিবাদ প্রদর্শনের কর্মসূচি নিয়েছেন তাঁরা। এর আগে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপের নিন্দায় ট্য়ুইট করেছেন অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু। খোলা চিঠি দিয়ে  সরব হয়েছেন পবিত্র সরকার, শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়, সব্যসাচী চক্রবর্তী, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়রাও।