মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর (পশ্চিম বর্ধমান): অমানবিকতার নিদর্শন। দুর্গাপুর শহরের মানুষ সাক্ষী রইল সাংঘাতিক এক ঘটনার। বৃদ্ধ বাবাকে ফেলে রেখে পালিয়ে গেল ছেলে, প্রকাশ্যে এল সামাজিক অবক্ষয়ের এমনই এক ছবি।
দুর্গাপুরের অন্ডাল এলাকার খাস কাজোড়া কোলিয়ারি এলাকার বাসিন্দা মুক্তি আকুরে। বয়স প্রায় সত্তরের কোঠায়। সেই প্রৌঢ়র আজ ঠাঁই হয়েছে এক প্রাসাদ সমান আবাসনের নোংরা আবর্জনার স্তূপের মাঝখানে। দুর্গাপুরের বেনাচিতির ভিড়িঙ্গির এক বহুতল আবাসনের নিচে আবর্জনার স্তূপে পড়ে থাকতে দেখা যায় ওই বৃদ্ধকে। খবর পেয়ে হাজির হন পুলিশ। তাঁরাই এসে উদ্ধার করে ওই বৃদ্ধকে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করেন।
কীভাবে ওই এলাকায় এসে পৌঁছলেন বৃদ্ধ?
সোমবার সকালে ঘুরতে যাওয়ার নাম করে বাবাকে নিয়ে বের হন ছেলে। এরপর অসুস্থ বাবাকে সেই আবাসনের নিচে বসিয়ে রেখে দিয়ে চলে যায় সে। নিজের অজান্তেই কখন যে সংসারের বোঝা হয়ে গেছেন ওই প্রৌঢ় বুঝতেই পারেননি। ছেলে বসিয়ে রেখে গেলে তার ফেরার অপেক্ষা করতে থাকেন বৃদ্ধ মুক্তি আকুরে। কিন্তু অপেক্ষা করতে করতে বেশ অনেকক্ষণ সময় কেটে গেলেও ফেরেনি ছেলে। বৃদ্ধের অভিযোগ, অসুস্থ প্রৌঢ় বাবাকে প্রায়ই মারধর করত ছেলে। তবুও ছেলের সেই অত্যাচারও মুখ বুজেই সহ্য করেছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। অবশেষে ঠাঁই মিলল রাস্তায়, আবর্জনায়। ছেলের অপেক্ষায় একদিকে বসে বৃদ্ধ বাবা, অন্যদিকে তাঁকে ফেলে ঘরে ফিরে গেছে ছেলে।
আরও পড়ুন: মাকে ‘খুনের চেষ্টা’ ছেলের, বোনকেও ছুরির কোপ
প্রথমটা কিছুই বুঝে উঠতে পারেননি প্রতিবেশীরাও। পরে তাঁরাই পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে ওই বৃদ্ধকে উদ্ধার করে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করেন। এই খবর সামনে আসতেই সকলের মুখেই একটাই কথা, এ যেন সামাজিক অবক্ষয়ের এক কঙ্কালসার ভয়ঙ্কর চেহারার ছবি তুলে ধরেছে। ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়ের স্বপ্নের শহর দুর্গাপুরের এই অমানবিকতার ছবি দেখে আজ বোঝার উপায় রইল না, এই গোটা শহর নাকি একদিন স্মার্ট শহরের প্রতিযোগিতার দৌড়ে ছিল।